পুষ্পা-২ নিয়ে বিবি বাংলার প্রকাশিত খবরে বলা হয় , মুক্তি পাওয়ার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই ‘পুষ্পা ২ : দ্য রুল’ ভারতের সর্বকালীন সব থেকে বেশি আয়ের সিনেমাগুলোর মধ্যে তিন নম্বরে উঠে এসেছে। এখন সামনে শুধু ‘বাহুবলী ২’ আর আমির খানের ‘দঙ্গল’।
বক্স-অফিস আয়ের হিসাব দেয়, এমন একটি ওয়েবসাইট স্যাকনিক জানাচ্ছে বুধবার বিকেল পর্যন্ত পুষ্পা ২-এর আয় হয়েছে প্রায় ৯৬২ কোটি রুপি। এর মধ্যে ছবিটির হিন্দি সংস্করণের থেকেই আয় হয়েছে ৫৭৩ কোটি রুপি।
এমনকি এই সিনেমার একটি প্রদর্শনীতে পদদলিত হয়ে একজনের মৃত্যুুর মতো ঘটনাও ঘটেছে।
কী আছে ছবিটিতে যার জন্য হাজার হাজার মানুষ ভারতের সিনেমাহলগুলোয় ভিড় করছেন?
বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল তেলুগু ছাড়াও হিন্দিসহ চারটি ভাষায় ‘ডাব’ করা সিনেমাটি পুরোটা জুড়ে একটাই শব্দ ছড়িয়ে আছে – বিনোদন, বিনোদন এবং বিনোদন।
আবার দক্ষিণী সিনেমার উত্তর ভারতের বাজার ধরার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে থেকে, পুষ্পা ২ সেই ধারাকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
কী আছে কাহিনীতে?
বিবিসি বাংলার খবরে পুষ্পা-২ এর কাহিনিতে বলা হয় , প্রথম ছবি ‘পুষ্পা’–এর কাহিনী যেখানে শেষ হয়েছিল, সিক্যুয়েলটির দ্বিতীয় ছবির গল্প শুরু হয়েছে সেখান থেকে। প্রথম ছবির মতোই পুষ্পা– ২-এরও নায়ক তেলুগু সিনেমার অভিনেতা আল্লু অর্জুন।
ছবির নায়ক পুষ্পারাজ পেশায় লাল চন্দন কাঠের চোরাকারবারী। নায়িকা রাশ্মিকা মানদানা এই ছবিতে পুষ্পার স্ত্রী শ্রীবল্লী।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিশদ তথ্যভাণ্ডার আইএমডিবির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, শ্রীবল্লী ইচ্ছা প্রকাশ করে যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুষ্পা একটা ছবি তুলে আনুক। কিন্তু একজন চোরাচালানকারীর সঙ্গে ছবি তোলা হলে নিজের ‘ইমেজ’ খারাপ হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী ছবি তুলতে রাজি হননি।
ক্ষেপে গিয়ে পুষ্পা মুখ্যমন্ত্রীকেই বদলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কেন্দ্রের নেতা ও বিধায়কদের রাজি করাতে ঘুস বাবদ জলের মতো অর্থ খরচ হতে থাকে পুষ্পার।
এদিকে নিজের ব্যবসা বাড়াতে উদ্যোগী হয়ে সে আন্তর্জাতিক চোরাচালানের রাস্তায় পা বাড়ায়। বিশাল অঙ্কের এক চোরাচালানের অর্ডার পায় পুষ্পা। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পুলিশ সুপার ভাঁওয়ার সিং শেখাওয়াত। পুষ্পা একবার শেখাওয়াতকে অপমান করেছিল বলে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে বদলা তিনি নেবেনই।
মূলত এভাবেই এগোয় সিনেমার গল্প।
‘ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের বা ভিএফক্স যন্ত্রের সাফল্য’
পুষ্পা ২ ছবিটি জুড়েই রয়েছে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের বা ভিএফক্স দেখানোর চেষ্টা। তা অবশ্য এখন যে কোনো ভারতীয় সিনেমাতেই দেখা যায়।
আবার দক্ষিণ ভারতের সিনেমায় চোখের দৃষ্টি দিয়ে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া বা হাত তুলে উড়ে আসা গুলি থামিয়ে দেওয়ার মতো অবাস্তব দৃশ্য দিয়ে দর্শকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার উপাদান অনেক দিন ধরেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
তার সঙ্গেই জুড়ে থাকে নায়কদের ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ইমেজ।
কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “ধ্রুপদী সিনেমা বলতে আমরা যা বুঝি – কাহিনী, অভিনয়, সঙ্গীত ও ক্যামেরার কাজ – এসব বিষয় আজকালকার সিনেমায় কমে আসছে।
“পুষ্পা ২ এর মতো সিনেমা, যেখানে ইলেক্ট্রনিক্সের বিচ্ছুরণ প্রতিটি দৃশ্যেই দেখা যায়, তাকে চলচ্চিত্রের সাফল্য না বলে যন্ত্রের সাফল্য বলাই উচিত। পুষ্পা -২ তে যে ধরনের কাজ হয়েছে, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়েছে, দর্শক সেই স্পেক্টাকল দেখতে যাচ্ছেন। এগুলো চলচ্চিত্রের মূল নন্দন তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত নয়।
তবে শুধু পুষ্পা – ২ তো নয়, আর শুধু দক্ষিণ ভারতেও নয়, যন্ত্রের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সাফল্য আসছে এরকম সিনেমা মুম্বাইতে যেমন হচ্ছে, তেমনই হলিউডেও দেখা যাচ্ছে,” বলছিলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।