ডিজিটাল ভূমি সেবার উন্নয়নে সরকারের নতুন উদ্যোগ, ঢাকায় পাইলট প্রকল্প শুরু
বাংলাদেশ সরকার ভূমি সেবাকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য আরও সহজ ও সুলভ করতে একটি আধুনিক ‘ল্যান্ড সার্ভিস গেইটওয়ে’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এই তথ্য জানা গেছে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আজ প্রকাশিত একটি পোস্ট থেকে।
পোস্টে বলা হয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের জরুরি নির্দেশনা অনুসারে, ভূমি ডিজিটাইজেশনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ঢাকা জেলার ১৯টি ভূমি সার্কেলে ই-মিউটেশনের উন্নততর ভার্শন এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যারের পাইলটিং শুরু হয়েছে।” এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নেতৃত্বে চারটি ভূমি সেবা—এলডি ট্যাক্স, ই-মিউটেশন, ই-পর্চা এবং ই-খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ—অনলাইনে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এলডি ট্যাক্স সেবা সারা দেশে কার্যকর করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকার ভূমি রাজস্ব আদায় সম্পন্ন হয়েছে। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “নাগরিক ভোগান্তি কমাতে বিচ্ছিন্নভাবে আলাদা আলাদা সফটওয়্যার সিস্টেমে ডিজিটাল ভূমি সেবা না দিয়ে সরকার এলডি ট্যাক্স, ই-মিউটেশন, ই-পর্চা/ই-খতিয়ানসহ চারটি সেবাকে আন্ত:সংযুক্ত করে একটি আধুনিক ‘ল্যান্ড সার্ভিস গেইটওয়ে’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।” এই গেইটওয়ের মাধ্যমে একটি একক রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সব সেবা গ্রহণ করা যাবে, যা নাগরিকদের জন্য সময় ও শ্রম সাশ্রয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, ই-মিউটেশন সেবার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টে বলা হয়, “যেহেতু ই-মিউটেশন পদ্ধতিগতভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত, পাশাপাশি এতে একাধিক সংস্থা ও দপ্তর সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এই সেবাটির পদ্ধতিগত সহজিকরণ এবং ই-নথি ব্যবস্থা সহজীকরণে আরো পর্যাপ্ত পাইলটিং প্রয়োজন।” এই সেবাটি বর্তমানে ঢাকার ১৯টি ভূমি সার্কেলে পাইলট পর্যায়ে রয়েছে।
এই প্রকল্পে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নিজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে পোস্টে বলা হয়, “ভূমি সেবা ডিজিটাইজেশনের পরবর্তী পর্যায়ে বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে অনলাইন ভূমি সেবাগুলোকে উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।” এই পদক্ষেপ গ্রামীণ পর্যায়ে ভূমি সেবার প্রাপ্যতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশের আদালতগুলোতে মোট মামলা এবং অপরাধের প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি ভূমির মালিকানা, দখল, বেদখল, অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর কেন্দ্রিক। এমতাবস্থায় সরকার ভূমি সেবাগুলোকে যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে সহজে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে উন্মুক্ত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এই উদ্যোগ সফল হলে ভূমি সেবা খাতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও নাগরিকদের ভোগান্তি কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকল্পটির পূর্ণ সাফল্য নির্ভর করবে পাইলট পর্যায়ের ফলাফল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের ওপর।