দেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন অভিযান নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সর্বশেষ তথ্য।
লকারে চোখ দুদকের: মানবজমিন
দৈনিক মানবজমিন জানায়, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য অনুসন্ধানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে জমা রাখা সম্পদের ওপর নজর দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর নামে থাকা তিনটি লকার খোলা হয়েছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণ উদ্ধার হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা লকার খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। কর্মকর্তারা মনে করছেন, অন্যান্য কর্মকর্তার লকারেও বিপুল অঙ্কের অর্থ থাকতে পারে।
বিদেশিদের তৎপরতা বাড়ছে: দেশ রূপান্তর
দৈনিক দেশ রূপান্তর তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের মতামত দিতে শুরু করেছে। এর আগে ভারত ছাড়া কেউ দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেনি, তবে এখন প্রায় সব পক্ষই চায় দ্রুত নির্বাচন। গত তিনটি নির্বাচনের মতো ভোট দেখতে চায় না বিদেশিরা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রগুলোর বরাতে পত্রিকাটি জানায়, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা শুরু হয়েছে এবং দিন যত যাবে, নির্বাচনের চাপ তত বাড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সংস্কার ইস্যুতে বিলম্ব করার পক্ষে নয়।
রাজনীতি তপ্ত হচ্ছে এ মাসেই: কালের কণ্ঠ
দৈনিক কালের কণ্ঠ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দল গঠনের প্রক্রিয়া রাজনীতির মাঠকে উত্তপ্ত করতে পারে। ছয় মাস আগে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপিও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ এবং নির্বাচনের দাবিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত: আজকের পত্রিকা
দৈনিক আজকের পত্রিকা জানায়, বিএনপি তাদের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করেছে। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং লুণ্ঠনের দ্রুত বিচার চাওয়া হয়েছে। দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি ছাত্রদের ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি শরিক দলগুলোর মতামত নিয়ে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করবে।
স্বৈরাচারের ৫৭২ দোসর জামিনে মুক্ত: যুগান্তর
দৈনিক যুগান্তর জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২২৫টি মামলার মধ্যে ৫৭২ জন আসামি জামিন পেয়েছেন। পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জামিনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে একপর্যায়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বড় নেতারাও জামিন পেয়ে যাবেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মামলায় জামিনের বিরোধিতা করা হলেও আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী।
নারী ফুটবলে অশান্তি: প্রথম আলো
দৈনিক প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে খেলতে চান না। ১৮ ফুটবলার ঘোষণা দিয়েছেন, এই কোচ থাকলে তারা অবসরে যাবেন। দলের অন্যতম খেলোয়াড় সাবিনা খাতুন বলেছেন, এটি দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
বায়ুদূষণ তীব্র হচ্ছে: নিউ এজ
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ জানায়, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ আরও তীব্র হচ্ছে এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঢাকার বাতাসের মান সূচক ছিল ১৭১, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৫০।
দুর্নীতি প্রতিরোধে গুন্ডা প্রতিরোধ বাহিনী গঠনের সুপারিশ: সমকাল
দৈনিক সমকাল তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘গুন্ডা প্রতিরোধ বাহিনী’ গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে এই টাস্কফোর্সের ৫৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে দক্ষ নেতৃত্ব ও অংশীদারিত্বমূলক সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিদেশিদের মধ্যস্থতা, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এবং ফুটবল দলের অস্থিরতা—সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট, রাজনৈতিক সমীকরণ, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে দেশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির গতি নির্ধারিত হবে।