বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বর্তমানে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে হিমাগারের বাইরে আলু বোঝাই ট্রাকের লাইন জমে থাকায় আলু নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হিমাগারের বাইরে দীর্ঘ লাইন ও আলু নষ্টের শঙ্কা নিয়ে দৈনিক সমকাল-এর প্রতিবেদন বলা হয়েছে , ফরিদপুরের হিমাগারের বাইরে আলু বোঝাই ট্রাকের দীর্ঘ সারি জমে আছে। গত ৫-৬ দিন ধরে অপেক্ষা করেও আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে হতাশ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, দীর্ঘ সময় ট্রাকে আলু রাখার কারণে গরমে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফরিদপুর শহরতলির রাজবাড়ী এলাকায় এ অবস্থা চলছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
একই ধরনের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছে কালের কণ্ঠ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমাগারে জায়গা না থাকায় কৃষকরা রাত জেগে আলু সংরক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছেন। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার কৃষক মোমিনুল ইসলামের উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, তিনি ১৮ বস্তা আলু নিয়ে ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজে এসেছেন, কিন্তু হিমাগারে জায়গা না পাওয়ায় তার আলু নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
হিমাগারে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করার বিষয়ে চাষিদের অভিযোগ রয়েছে , বিডিনিউজ২৪-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জয়পুরহাটে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য চাষিদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। চাষিরা অভিযোগ করেছেন, হিমাগারে আলু তোলার জন্য বস্তা প্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব-এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মাদারীপুরের চাষিরা বাজারে আলুর দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। অনেক চাষি ঋণ করে আলু চাষ করেছিলেন, কিন্তু এখন ন্যায্য দাম না পেয়ে ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন, আলু মজুদ করে রাখলে পরে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যেতে পারে। তবে হিমাগারে জায়গা না থাকায় চাষিরা সে সুযোগও পাচ্ছেন না।
হিমাগারের সক্ষমতা ও চাষিদের সংকট নিয়ে প্রথম আলো-এর প্রতিবেদনে ফরিদপুরের হিমাগারের সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার গোয়ালচামট এলাকায় ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুর হিমাগার লিমিটেড মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করে থাকে। তবে বর্তমানে হিমাগারের সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না। এতে করে আলু নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
আলুর চাষ ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে সংবাদ অনলাইন-এ প্রকাশিত মিহির কুমার রায়ের একটি নিবন্ধে আলুর চাষ, বীজ উৎপাদন ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে আলু মানুষের প্রধান খাদ্য এবং বহু দেশে পশুখাদ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। তবে হিমাগারের সীমিত সক্ষমতা এবং বাজারে দাম না থাকায় তা চাষিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, হিমাগারের সক্ষমতা বাড়ানো এবং আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া, হিমাগারে অতিরিক্ত অর্থ দাবি বন্ধ করতে কঠোর নজরদারিরও দাবি উঠেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হিমাগারে আলু সংরক্ষণ নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছেন। হিমাগারের সীমিত সক্ষমতা, অতিরিক্ত অর্থ দাবি এবং বাজারে দাম কম হওয়ায় তা চাষিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সরকারি পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তথ্যসূত্র: সমকাল ,দৈনিক ইনকিলাব ,কালের কণ্ঠ ,প্রথম আলো ,সংবাদ অনলাইন ,বিডিনিউজ২৪,কালবেলা ,আজকের পত্রিকা ।