জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর নিয়ে দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যাপকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংলাপ, এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গুতেরেসের সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা। দৈনিক ইত্তেফাক জানায়, গুতেরেস কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও জোরালো ভূমিকা কামনা করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুতেরেস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হলো তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন।
প্রথম আলো-এর খবরে বলা হয়েছে, গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সরেজমিনে দেখেন এবং তাদের মানবিক সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
গুতেরেসের সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। সমকাল-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুতেরেস বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য ও সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধান করা সম্ভব।
দ্য ডেইলি স্টার বাংলা জানায়, গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেন। তবে ফখরুল দৈনিক ইত্তেফাক-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্য তিনি পুরোপুরি বুঝতে পারেননি।
মানবজমিন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুতেরেস বাংলাদেশের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচন যত দ্রুত করা যায়, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
গুতেরেস তার সফরে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে জাতিসংঘের পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে জাতিসংঘ সর্বাত্মক সহায়তা করবে।
চ্যানেল আই-এর খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে জাতিসংঘ পাশে থাকবে। গুতেরেস বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গুতেরেস বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অবদানের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বিশ্ব শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দৈনিক ইত্তেফাক-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুতেরেস ঢাকা ছাড়ার আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে জাতীয় সংলাপের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর খবরে বলা হয়েছে, গুতেরেসের সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অর্থবহ ছিল। তার সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমগুলো গুতেরেসের সফরকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করেছে। দ্য ডেইলি স্টার-এর মতে, গুতেরেসের সফর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
সমকাল-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুতেরেসের সফরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের ইচ্ছার উপর।
প্রথম আলো-এর মতে, গুতেরেসের সফর বাংলাদেশের সংস্কার ও পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সংহতি প্রকাশ করেছে। তার সফরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা সংকট সমাধান, রাজনৈতিক সংলাপ ত্বরান্বিত করা, এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহযোগিতা করা। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে গুতেরেসের সফরকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
(সুত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, দৈনিক ইত্তেফাক, প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, সমকাল, চ্যানেল আই, বাংলাদেশ প্রতিদিন, মানবজমিন, কালের কণ্ঠ, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস)