খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি, দোষীদের শনাক্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রশাসনের ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কুয়েটের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
সোমবার বিকেলে কুয়েট ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ছাত্রদলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে একটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধের জের ধরেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে। কালের কণ্ঠ জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর যুবদল নেতা মাহবুবকে বহিষ্কার করেছে কুয়েট প্রশাসন।
সংঘর্ষের পরপরই কুয়েট প্রশাসন জরুরি বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। পরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় এবং শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। প্রথম আলো জানিয়েছে, দোষীদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনার পর কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, রাজনৈতিক বিরোধের কারণে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। The Daily Star বাংলা জানিয়েছে, একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ক্যাম্পাসে এখনো টহল ব্যবস্থা জোরদার রাখা হয়েছে এবং দোষীদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর কুয়েট প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
সাংবাদিকদের দৃষ্টিকোণ ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সংঘর্ষের ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছে। কালের কণ্ঠ অস্ত্রধারী যুবদল নেতা মাহবুবের বহিষ্কারের খবরকে গুরুত্ব দিয়েছে, প্রথম আলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত ও তদন্ত কমিটির গঠনের দিকটি তুলে ধরেছে। The Daily Star বাংলা শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রশাসনবিরোধী আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়েছে, আর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার সংবাদটি সামনে এনেছে।
সামনের পথবিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে, কারণ তারা জানে না কবে আবার ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে, যা শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কুয়েটের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।