ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার সাম্প্রতিক বৈঠককে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীরতর করার নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, অভিবাসন নীতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের পর দ্বিতীয় মেয়াদে এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং আমরা একসঙ্গে আরও শক্তিশালী ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চাই।” মোদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসঙ্গ
দুই নেতা ভবিষ্যতে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করা হবে। এছাড়া ভারতীয় বাজারে মার্কিন পণ্যের প্রবেশাধিকার সহজ করতে শুল্ক নীতির কিছু পরিবর্তন আনতে রাজি হয়েছে নয়াদিল্লি।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ভারত এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস দমনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
অভিবাসন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতেও উভয় দেশ একমত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “অবৈধ অভিবাসন কোনো দেশের জন্যই কল্যাণকর নয়, ভারত এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।” পাশাপাশি, মানব পাচার রোধেও ভারত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।” মোদি বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং এটি আরও সুদৃঢ় করতে আমরা একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।”
বৈঠকের শেষে ট্রাম্প-মোদি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একে অপরের বিশ্বস্ত অংশীদার। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলো এবং কৌশলগত দিক থেকে উভয় দেশ নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করল।