বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে কথা বলেছেন। সমকালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান সরকারের কিছু সফলতার কথা স্বীকার করলেও, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক খাতে তাদের ব্যর্থতার দিকগুলোরও উল্লেখ করেছেন।
সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যা ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে সরকারের ব্যর্থতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয়, এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে আগের সরকারের লোকজন বহাল থাকায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসছে না।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, যার ফলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির অবস্থান
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চান। যদিও বিএনপির কিছু নেতা আগেই নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছেন, তবে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, “নির্বাচন যত দ্রুত হবে, দেশের মানুষের জন্য ততই ভালো হবে।”
তিনি স্বীকার করেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চায়, তবে সেটি সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্যই হলো রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া, যাতে আমরা আমাদের সংস্কার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি।”
জাতীয় সরকার না হওয়ার কারণ
গণঅভ্যুত্থানের সময় জাতীয় সরকার গঠনের আলোচনা থাকলেও, তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মির্জা ফখরুল বলেন, “জাতীয় সরকার হলে হয়তো পাল্টা ক্যু হয়ে যেত। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন ছিল যে, তখন জাতীয় সরকার গঠিত হলে প্রতিদিন নতুন নতুন বিতর্ক তৈরি হতো।”
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলকে সরাসরি নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নয়, বরং এ বিষয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
নতুন রাজনৈতিক শক্তি ও বিএনপির অবস্থান
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই।” তবে ‘বিপ্লব’ বনাম ‘গণঅভ্যুত্থান’ বিতর্ক নিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান ছিল, কিন্তু বিপ্লব ছিল না।
নির্বাচন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কিছু কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ধরনের অপরাধ দলে সহ্য করা হবে না, এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পারস্পরিক মর্যাদা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।” সীমান্ত হত্যা বন্ধ, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন এবং বাণিজ্যে ভারসাম্য আনাই তাদের মূল দাবি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপি চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন চায় এবং ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়েও বিতর্ক চলছে।
সাক্ষাৎকারের আলোকে স্পষ্ট, আগামী দিনে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও বাড়তে পারে এবং নির্বাচন নিয়ে নানা দিক থেকে চাপ তৈরি হতে পারে। বিএনপি আপাতত অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করলেও, নির্বাচনের রোডম্যাপ স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।