সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি নাজুক দিককে সামনে নিয়ে এসেছে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এই ঘটনাগুলোর বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে। সীমান্তে উত্তেজনা দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মেনে চলার গুরুত্বকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়।
ঘটনার প্রেক্ষাপট কি ?
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে ভারতের বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করে। বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাজটি শুরু করার আগে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসারে তাদের অবহিত করা হয়নি। এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হলেও নির্মাণ কার্যক্রম বারবার পুনরায় শুরু হয়, যা উত্তেজনার মাত্রা বাড়ায়। একই ধরনের ঘটনা নওগাঁর ধামইরহাটেও দেখা গেছে।
মানুষের অংশগ্রহণ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া কি?
এই সীমান্ত পরিস্থিতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, দুই দেশের মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা শুধু উত্তেজনা বাড়ায় না, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নিরীহ মানুষের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলে।
সমন্বয়ের ঘাটতি ও চুক্তি লঙ্ঘন
১৯৭৫ সালের সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী, শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজের জন্য উভয় দেশের সম্মতি প্রয়োজন। বিজিবির অভিযোগ, বিএসএফ এই নিয়ম মানেনি। অন্যদিকে, বিএসএফ দাবি করেছে যে তারা পূর্ব অনুমোদন নিয়েই কাজ করেছে। তবে এই অনুমোদনের সঠিকতা এবং তা কার্যকর করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
সমাধানের পথ কি?
সীমান্তে এমন উত্তেজনা এড়াতে প্রথমেই প্রয়োজন দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও কার্যকর যোগাযোগ। নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে, তা অবিলম্বে সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে, উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের মধ্যস্থতায় স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা উচিত বলে মনে করা হচ্ছে ।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বে কি ফাটল ধরাবে ?
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে, যা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করে। এমন পরিস্থিতি পারস্পরিক আস্থার অভাবকে ইঙ্গিত করে। দুই দেশের উচিত সীমান্ত এলাকাকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা এবং সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে এই ধরনের উত্তেজনা এড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সীমান্তের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা শুধু দুই দেশের সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি দুই দেশের জনগণেরও যৌথ চাওয়া।