স্বাধীন মতপ্রকাশ ও কণ্ঠরোধের শঙ্কা
সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। সম্প্রতি সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এটি সাময়িক ব্যবস্থা বলে দাবি করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রতিদিন অস্থায়ী পাস ইস্যু করবে বলে জানানো হয়েছে।
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা এ সিদ্ধান্তকে ‘হটকারী’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বুধবার রাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুনে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যায়।
খবরে বলা হয় , তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পিআইডি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করে। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। পিআইডির সঙ্গে আলোচনা না করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত নভেম্বরে ১৬৭ সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে। নতুন সিদ্ধান্ত আরও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, এটি সংবাদমাধ্যমের তথ্যপ্রবাহ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয় বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি সমাধানের দাবি জানানো হবে। সাবেক ছাত্রনেতা আবু তৈয়ব হাবিলদার দুই সন্তানসহ সচিবালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এটি অশুভ ইঙ্গিত বহন করে।
মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত মানুষের মধ্যে অনাস্থার জন্ম দিতে পারে। ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকারের যুক্তিকে খোঁড়া হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, সচিবালয়ে প্রতিদিন সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার কর্মচারী নিজস্ব কার্ড দিয়ে প্রবেশ করেন। দর্শনার্থী ও অন্যান্যদের জন্য দিনে প্রায় দেড় হাজার অস্থায়ী পাস ইস্যু করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার মানুষ সচিবালয়ে প্রবেশ করতেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রবেশকারীর অনেকেই বিভিন্ন তদবিরে আসতেন।
সরকারি সিদ্ধান্তে সাংবাদিকদের কার্ড বাতিলের পেছনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে থাকা কার্ডের অপব্যবহার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার নতুন কার্ড ইস্যুর পরিকল্পনা করছে এবং সাংবাদিকদের অস্থায়ী পাস ইস্যু করা হবে।
পুলিশের হাত থেকে ফৌজদারি তদন্তের ভার সরানোর প্রস্তাব
আজকের পত্রিকার শিরোনাম এটি , খবরে বলা হয় , বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন এই সংস্থা হবে পুলিশ বাহিনীর বাইরে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো। এখানে তদন্ত করবেন বিশেষভাবে নিয়োজিত তদন্ত কর্মকর্তারা, যাদের কাজ তদারকি করবেন সংশ্লিষ্ট অ্যাটর্নি বা প্রসিকিউটর।
কমিশনের মতে, পুলিশের বদলে এই স্বতন্ত্র সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে ফৌজদারি মামলার তদন্ত আরও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ হবে। এ প্রস্তাব ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্তের মান উন্নয়নের দাবি
সংস্কার কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, ফৌজদারি মামলার তদন্তের গুণগত মান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত, পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব কিংবা অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনের কারণে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পায় না, বরং নিরপরাধ ব্যক্তিরা ফেঁসে যান।
তাদের মতে, পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের ফলে দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে, বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমবে এবং নির্দোষদের ফাঁসানোর ঝুঁকি থাকবে না। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া নেই
এ প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মতামত দিতে পারেন না।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ফৌজদারি তদন্ত—দুটি দায়িত্বই পালন করে। পৃথক সংস্থা গঠনের মাধ্যমে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে আরও মনোযোগ দিতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে: আইন উপদেষ্টা ও প্রসিকিউটর
প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম এটি , উক্ত খবরে বলা হয় , জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচার আগামী বিজয় দিবসের আগেই শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত একটি সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আগামী বিজয় দিবসে গণহত্যাকারীদের শাস্তির রায় উদ্যাপন করব বলে আশা করছি।”
একই ধরনের আশাবাদ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ট্রাইব্যুনালে প্রধান অভিযুক্তদের বিচার আগামী এক বছরের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হবে।” তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ঐক্য ও সংস্কার ছাড়া এই বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা কঠিন হবে।”
“গুম-খুন থেকে জুলাই গণহত্যা: বিচারের চ্যালেঞ্জ” শিরোনামে দুই দিনের জাতীয় সংলাপের শেষ দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপটি আয়োজন করেছিল একাডেমিক ও গবেষকদের প্ল্যাটফর্ম ‘ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ’। এতে আইন উপদেষ্টা, অ্যাটর্নি জেনারেল, চিফ প্রসিকিউটরসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন।
সংলাপে আলোচিত হয়, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে। এ পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৯৪টি অভিযোগ এসেছে এবং একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
তাছাড়া, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলায় ৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, হাসানুল হক ইনু প্রমুখ। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবং বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন—এই তিনটি মূল দায়িত্ব নিয়েই আমরা কাজ করছি।” তিনি জানান, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ধারাবাহিক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচারও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “ঐক্য ও সংস্কার ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা কঠিন। পাশাপাশি, বিচার প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”
জুলাই গণ হত্যার বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে , চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো মাস্টারমাইন্ডদের বিচার করা।” তিনি আরও বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই গণহত্যার নিউক্লিয়াস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা রয়েছে।”
আহত ও শহীদদের তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয় ,গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। সর্বশেষ খসড়া তালিকায় শহীদ সংখ্যা ৮২৮ এবং আহত ১১,২৭০। তবে এই তালিকা এখনও চূড়ান্ত নয়।
বিচারের অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদ নিয়ে সংলাপ শেষে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “আগামী এক বছরের মধ্যেই প্রধান অভিযুক্তদের বিচার সম্পন্ন করা হবে। এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বক্তারা মনে করেন, এই বিচার দেশকে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সহায়তা করবে।