সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদনের পর বিশেষজ্ঞরা পুলিশের বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, এই বিধানটি পুলিশি হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে পুলিশ দাবি করছে, তারা অধ্যাদেশের বিধান অনুসরণ করেই কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর ৩৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিশ্বাস হয় যে কোথাও অধ্যাদেশে বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে তিনি লিপিবদ্ধ করে ওই স্থানে প্রবেশ করে তল্লাশি চালাতে পারবেন। এতে কোনো পরোয়ানার প্রয়োজন হবে না। তল্লাশি চলাকালে অপরাধে ব্যবহৃত কম্পিউটার, সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা তথ্য-উপাত্ত সরঞ্জাম এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক দলিল জব্দ করা যাবে। এছাড়া তথ্যপ্রমাণ নষ্টের আশঙ্কা থাকলে তল্লাশি, গ্রেফতার ও জব্দের জন্য পুলিশের কোনো পরোয়ানার প্রয়োজন হবে না। ধারাটিতে সংশ্লিষ্ট স্থানে উপস্থিত যে কারো দেহ তল্লাশি এবং উপস্থিত কাউকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
আইটি বিশেষজ্ঞ আরিফ মঈনুদ্দীন বলেছেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলোয় সফলতার হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ। বাকি সব ছিল ভুয়া এবং হয়রানির জন্য। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশেও যদি পুলিশের একই ধরনের ক্ষমতা বহাল থাকে সেক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধী শনাক্তের চেয়ে হয়রানির ঘটনা বেড়ে যাবে।’
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এ অপরাধের আওতায় ব্ল্যাকমেইলিং (প্রতারণা) ও অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশসংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড নতুন করে যুক্ত হয়েছে। খসড়ায় যে কারো মামলা করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরাসরি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তার নিয়োগকৃত ব্যক্তি অথবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাদে অন্য কেউ এ আইনের অধীনে মামলা করতে পারবেন না। আগের আইনে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিসহ অন্য যে কারো মামলা করার সুযোগ ছিল। এতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করার সুযোগ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেছেন, ‘আগের আইনে যা ছিল, নতুন আইনে যদি তা-ই থাকে তাহলে বিষয়টি হবে “নতুন বোতলে পুরনো মদের” মতো।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, পুরনো আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো নতুন অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা দমন-পীড়নের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদনের পর বিশেষজ্ঞরা পুলিশের বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, এই বিধানটি পুলিশি হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে পুলিশ দাবি করছে, তারা অধ্যাদেশের বিধান অনুসরণ করেই কার্যক্রম পরিচালনা করবে।