যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি সরকারি অর্থ ব্যবহারে অনিয়ম করেছেন, যা যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ।
টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি সব সময় নিয়ম মেনে কাজ করেছি এবং সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেছি।”
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, টিউলিপের পার্লামেন্টারি ফান্ড থেকে কিছু অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া তার কার্যালয়ের ব্যয়ের একটি অংশ সরকারি নীতিমালা ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্তকারীরা এই অভিযোগের পেছনের সত্যতা যাচাই করার জন্যই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
তবে টিউলিপ সিদ্দিকের সমর্থকরা এই অভিযোগকে “বিচারিক হয়রানি” বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন, তার রাজনীতিক জীবনের সফলতা এবং প্রভাব খাটো করার জন্যই এই অভিযোগ আনা হয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকা হামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নের বাসিন্দারাও এই অভিযোগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ তদন্তের সুষ্ঠু সমাধান আশা করছেন।
তদন্তটি বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা বিদ্বেষমূলক আচরণ করা হবে না।”
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। লেবার পার্টির জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ টিউলিপ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং তার জনপ্রিয়তা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্ক থাকার কারণে এই ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই অভিযোগ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
এখন পর্যন্ত এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তবে তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। যুক্তরাজ্যের আইনে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন যে তিনি এই তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আত্মবিশ্বাসী।
এই ঘটনাটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকের ভাগ্যে কী রয়েছে, তা জানতে পুরো বিষয়টির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন অপেক্ষায় রয়েছে।