চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী নদীর তীরে একটি জাহাজে ৭ জন শ্রমিককে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুরো অঞ্চলজুড়ে শোক এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের স্বজনেরা লাশ নিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ভিড় জমিয়েছেন। হতভাগ্য পরিবারগুলোর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। একই সঙ্গে, ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
শনিবার মধ্যরাতে কর্ণফুলী নদীর পাশে একটি পরিত্যক্ত জাহাজে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে। নিহতরা সবাই জাহাজে কাজ করা শ্রমিক ছিলেন। পুলিশের মতে, তাদের গলায় দাগ এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত দেয়।
লাশ সনাক্ত করতে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সকাল থেকে মর্গে উপস্থিত হন। এসময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক স্বজন বলেন, “আমার ভাই তিন মাস ধরে কাজ করছে, কোনো শত্রু ছিল না। কেন এমন হলো, বুঝতে পারছি না।” স্বজনদের দাবি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।
শিল্প মন্ত্রণালয় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক জ্যেষ্ঠ সচিবকে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মেরিটাইম বিশেষজ্ঞ, শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “এটি একটি চরম দুঃখজনক ঘটনা। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে দোষীরা কঠোর শাস্তি পাবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষায় আমরা নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাহাজের অন্যান্য শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ঘটনার সময় জাহাজে উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, পারিশ্রমিক নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল এই ঘটনার কারণ হতে পারে।
এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চট্টগ্রামের শ্রমিক সমাজ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত শেষ করে বিচারের দাবি তুলেছে। স্থানীয় এক শ্রমিক নেতা বলেন, “এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তার সংকট তৈরি করছে।”
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র নিহতদের পরিবার নয়, পুরো দেশকে শোকাহত করেছে। তদন্ত কমিটির কাজ এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ঘটনাটি শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং অধিকার সুরক্ষায় একটি বড় প্রশ্ন তুলেছে, যা ভবিষ্যতে নতুন নীতিমালা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।