ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এই কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করেছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে এই গণজমায়েতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। নিম্নে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
জনতার ঢল ও প্রতিবাদের স্লোগান
বাংলানিউজ২৪.কম জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। এই গণজমায়েতের কারণে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
দৈনিক ইত্তেফাক জানায়, সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল নামে। শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে মানুষ এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। কর্মসূচির সুশৃঙ্খলতা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবকরা সক্রিয় ছিলেন।
দি ডেইলি স্টার জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হওয়া জনতা স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানায়। “‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য ধরো, ফিলিস্তিন স্বাধীন কর’—এই স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা।” শুধু ধর্মীয় নেতারাই নয়, শিক্ষার্থী, ক্রীড়াবিদ এবং সাধারণ মানুষও উল্লেখযোগ্যভাবে অংশ নেন।
ঘোষণাপত্র ও মোনাজাত
দৈনিক শিক্ষা জানায়, কর্মসূচির শেষে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানানো হয়। গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে একটি বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ফিলিস্তিনের শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য দোয়া করা হয়।
দৈনিক ইত্তেফাক আরও জানায়, ঘোষণাপত্রে বিশ্ব মুসলিম নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। মোনাজাতে অংশগ্রহণকারীদের চোখে অশ্রু দেখা যায়, যা ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের গভীর সমবেদনার প্রকাশ।
দৈনিক জনকণ্ঠ জানায়, ঘোষণাপত্রে গাজায় গণহত্যা বন্ধের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ
কালের কণ্ঠ জানায়, কর্মসূচিতে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহ এবং নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। আজহারী বলেন, “এই জনসমুদ্র আল-আকসার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ।” বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অংশ নেন।
বিবিসি বাংলা জানায়, কর্মসূচি শুরুর আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল নামে। স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশ করা হয়। আয়োজকরা সুশৃঙ্খলভাবে জনতাকে পরিচালনা করতে সক্ষম হন।
নির্দেশনা ও সুশৃঙ্খলতা
দৈনিক ইত্তেফাক জানায়, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পাঁচটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। শায়খ আহমাদুল্লাহর নির্দেশনায় বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করতে হবে এবং কোনো রাজনৈতিক প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রেখে কর্মসূচির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সমকাল জানায়, কর্মসূচির সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পতাকা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। স্থানীয় বিক্রেতারা ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি করে ব্যাপক সাড়া পান। আয়োজকরা বিনামূল্যে পানি ও শরবত বিতরণ করেন।
অন্যান্য স্থানে প্রতিবাদ
দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানায়, শুধু ঢাকায় নয়, বরিশালেও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সংগঠনগুলো ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। স্থানীয় মানুষ ফিলিস্তিনের জন্য শান্তি কামনা করে।
বাংলা ট্রিবিউন জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে মিছিল নিয়ে যায়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান
কালের কণ্ঠ জানায়, কর্মসূচিতে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। আয়োজকরা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে চাপে ফেলতে পণ্য বয়কট কার্যকর হতে পারে। এই আহ্বানে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লক্ষ্য করা যায়।
দি ডেইলি স্টার বাংলা জানায়, কর্মসূচির প্রভাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পড়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ছিল স্পষ্ট।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
সংবাদ প্রকাশ জানায়, রাজধানীতে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিনামূল্যে পানি ও শরবত বিতরণ করা হয়। এটি সামাজিক সংহতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
দি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানায়, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইআবি) ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
আইনশৃঙ্খলা ও প্রস্তুতি
দৈনিক ইত্তেফাক আরও জানায়, ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখে। কর্মসূচির আগে থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
দি ডেইলি ক্যাম্পাস জানায়, কর্মসূচির কারণে মেট্রোরেলে অতিরিক্ত ভিড় সৃষ্টি হয়, ফলে কিছু সময়ের জন্য টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এটি কর্মসূচির ব্যাপকতার ইঙ্গিত দেয়।
উপসংহার
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি গভীর সংহতি ও সমর্থনের প্রকাশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট, এই কর্মসূচি শুধু একটি প্রতিবাদই নয়, বরং মানবাধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে বাংলাদেশের জনগণের অবস্থানের প্রতিফলন। সুশৃঙ্খল আয়োজন, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এই কর্মসূচিকে ঐতিহাসিক করে তুলেছে।