সম্প্রতি এক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক [উত্তরাঞ্চল] সারজিস আলম। আজ ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি তার কাজের মূল্যায়ন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ‘বিচার’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সারজিস আলম তার পোস্টে বলেন, “বোন আছিয়ার সাথে নৃশংস একটা ঘটনা ঘটলো। আমি আমার জায়গা থেকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে জানালাম দ্রুত আসামি গ্রেফতার করার কথা। আবার- হাইকোর্ট থেকে ঘোষণা আসলো ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আমি আমার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমার মতামত জানালাম। ১৮০ দিন অনেক বেশি হয়ে যায়। এটা ১-২ মাসের মধ্যে করা উচিত। নাহলে মানুষের মাথা থেকে ঘটনাটা অনেকটাই মুছে যায় এবং সেই অপরাধের শাস্তি আদতে সমাজে অপরাধ দমনে তেমন প্রভাব রাখতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি একাই জানিয়েছি কিংবা আমার জানানোর জন্যই গ্রেফতার হয়েছে বা আইন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমার জায়গা থেকে মনে হয়েছে এটা আমার করা উচিত তাই আমি করেছি। তবে সে বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেইনি। এরপর আছিয়াকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হলো। আমিও ঢাকা মেডিকেলে গেলাম। যখন জানলাম ICUতে আছে তখন আর ICUতে দেখতে যাইনি। কারণ বাইরে থেকে ICUতে দেখতে গেলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। মেডিকেলের বাইরে থেকে খোঁজখবর নিয়ে চলে এসেছি। ছবি পোস্ট করিনি। এরপর যখন জরুরি অবস্থায় CMH নেয়া হলো তখন সেদিনই সন্ধ্যায় নাগরিক পার্টির কয়েকজন সহ CMH গিয়েছি। সেখানেও ICUতে ছিল আছিয়া। দেখতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল বলে CMH এর সামনে থেকে ডিউটিরত ডাক্তারের সাথে কথা বলে সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে বাসায় ফিরেছি। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেইনি। এরপর CMH এ থাকা আমাদের ছাত্র প্রতিনিধিদের থেকে খোঁজ নিয়েছি। সবশেষে যখন শুনলাম আছিয়া আর নেই তখন সিএমএইচে ছুটে গিয়েছি। সেনাবাহিনী, র্যাব থেকে পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত হেলিকপ্টারে যখনই একাধিক সিট খালি থাকার কথা শুনেছি তখনই মাগুরায় গিয়ে আছিয়ার জানাযায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছি এবং জানাযা পড়ে আবার ঢাকায় ব্যাক করেছি।”
সারজিস আলম অভিযোগ করেন, “এই পুরো ঘটনার মধ্যে সর্বশেষ অংশটুকু আমি ফেসবুকে দিয়েছি এবং ফেইসবুকে দেয়া অংশটুকু কে ‘সামগ্রিক’ মনে করে মিডিয়া এবং কিছু পাবলিক জাজমেন্ট করা শুরু করলো। তার মানে আমরা যতটুকু সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশ করি ততটুকুই হচ্ছে বলে আপনারা মনে করেন এবং সেটাকে পুরো ঘটনা ধরে জাজমেন্ট শুরু করে। অর্থাৎ আপনারাও আসলে ফুটেজের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। আবার যদি কোনো কিছু না দেই তখন মনে করেন কিছুই করা হয়নি! কি অদ্ভুত! দিলে বলেন ফুটেজমুখী আর না দিলে বলেন কিছুই করেনি। আপনাদের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কবে একটা সিঙ্গেল স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হবে?”
তিনি কালের কণ্ঠের সমালোচনা করে বলেন, “আছিয়ার জানাজা ছিল সন্ধ্যা সাতটায়। আমরা পৌঁছেছি সাড়ে পাঁচটায়। এই দেড় ঘন্টা একটা ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করেছি। তার মধ্যে কয়েক মিনিট হয়তো ফোনের নোটিফিকেশন চেক করেছি। ঠিক ওই সময়ে কেউ ছবি তুললো এবং কালের কন্ঠ একাধিক বারের মতো এবারও অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে তাদের অনলাইন পোস্টারে সেটা প্রকাশ করলো। পাশাপাশি এমনভাবে দেখালো যে আমরা মনে হয় পুরো সময় বসে শুধু ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। চাইলেই কিন্তু তারা ওখানে বসে থাকার অন্য সময়ের নরমাল কোন ছবি ব্যবহার করতে পারতো। কিন্তু কিছু রিয়াকশন বেশি পাওয়ার আশায় সেটা তারা করেনি।”
সারজিস আলমের এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমের ভূমিকা, মানুষের কাজের মূল্যায়ন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে।