ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী—বিএসএফ ও বিজিবি—এর মধ্যে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন নিয়ে কোনো ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্ত সুরক্ষা, অনুপ্রবেশ রোধ, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়ে আলোচনা হলেও, শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ প্রধান বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
‘দৈনিক ইত্তেফাক’, ‘বিবিসি নিউজ বাংলা’, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন’ এবং ‘ঢাকা পোস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজিবি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুসারে শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো নির্মাণকাজের জন্য দুই দেশের সম্মতি প্রয়োজন। তাদের দাবি, ভারতের একতরফা পদক্ষেপ এই আইনের লঙ্ঘন এবং সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বেড়া পূর্বের দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার অংশ এবং এটি অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার ও মানব পাচার রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘দৈনিক ইত্তেফাক’ লিখেছে, “ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বৈঠকে ঐক্যমত্য হলো না।” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অচলাবস্থা সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতির উপর প্রশ্ন তুলেছে। ‘বিবিসি নিউজ বাংলা’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “কাঁটাতারের বেড়া ইস্যুতে একমত হতে পারলো না বিএসএফ ও বিজিবি।” তাদের মতে, বৈঠক শেষে কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধানের প্রস্তাব না আসায় ভবিষ্যতে সংঘাতের আশঙ্কা রয়ে গেছে। ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন’ আরও যোগ করেছে, “সীমান্ত নিয়ে বৈঠকে ঐকমত্য না হওয়ায় উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।” তারা উল্লেখ করেছে, কাঁটাতারের বেড়া ছাড়াও অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনায় কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি।
‘ঢাকা পোস্ট’ একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে লিখেছে, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর অতিরঞ্জিত: বিজিবি প্রধান।” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি বৈঠকে জানিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কিছু খবর অতিরঞ্জিতভাবে প্রচারিত হয়েছে। তিনি সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে ভারতের সঙ্গে মতবিরোধ অব্যাহত রয়েছে।
বৈঠকে বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী জানিয়েছেন, ৪১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে এই বেড়া অপরিহার্য। তবে, বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে উভয় পক্ষই শান্তি ও সহযোগিতার কথা বললেও, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে সমাধান না হওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ইস্যুটির সমাধানে ভবিষ্যতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে।