বাংলাদেশ সরকার বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আজ সকালে প্রকাশিত সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২২ জন জেলা প্রশাসককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, এবং আরও ৩৩ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ডিসিদের ২২ জন বাধ্যতামূলক অবসরে, অন্যদের ওএসডির সিদ্ধান্ত” গৃহীত হয়েছে। এই তিনটি নির্বাচনের মধ্যে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন উল্লেখযোগ্য। সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে অনিয়ম বা বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও এ বিষয়ে সরকারি মহল থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
দৈনিক ইত্তেফাক জানিয়েছে, “ওএসডি হওয়া ৩৩ জেলা প্রশাসকের তালিকা প্রকাশ” করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের তালিকায় বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা রয়েছেন। ওএসডি কর্মকর্তারা সাধারণত কোনো সক্রিয় দায়িত্ব পান না, তবে তাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকে। এদিকে, কালের কণ্ঠের খবরে বলা হয়েছে, “২২ ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার,” যা এই পদক্ষেপের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্ত গতকাল রাতে চূড়ান্ত হয় এবং আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ডিসিদের মধ্যে এমন কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। অন্যদিকে, ওএসডি হওয়া ৩৩ জনের মধ্যে কয়েকজনের নাম নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ সরকারের প্রশাসনিক সংস্কার বা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়াসের অংশ হতে পারে। তবে কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখছেন, বিশেষ করে নির্বাচনের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন সরকারি কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটা প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তবে এর পেছনের কারণ স্পষ্ট না হলে জনমনে নানা প্রশ্ন থেকে যাবে।”
সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবৃতি দেওয়া না হলেও, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই পদক্ষেপের প্রভাব এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনের বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ পেতে পারে। এদিকে, বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া এবং ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।