ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ঝুলছে মদের খালি কাচের বোতল—এই দৃশ্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসী এবং বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্য অনুসারে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এই বোতলগুলো ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিএসএফ অবশ্য বিষয়টিকে সীমান্ত সুরক্ষার অংশ হিসেবে তুলে ধরেছে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সীমান্ত সুরক্ষায় বোতল ব্যবহারের কারণ
বিএসএফ-এর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসি নিউজ বাংলাকে জানান, “কাঁটাতারের বেড়ায় কেউ কাটার চেষ্টা করলে বা নাড়াচাড়া করলে বোতল থেকে শব্দ হবে বা তা পড়ে ভেঙে যাবে। এর ফলে প্রহরীরা দ্রুত সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। বিশেষত রাতে সীমান্ত সুরক্ষায় এটি অত্যন্ত কার্যকর।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। প্রতিটি সীমান্ত অঞ্চলের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।” বিবিসি নিউজ বাংলার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দারা এই ব্যবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে মনে করছেন, বোতলের ভেতরে ক্ষতিকর কিছু থাকতে পারে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, এটি মূলত বিএসএফ-এর একটি অস্থায়ী সুরক্ষা উদ্যোগ। স্থানীয়ভাবে সীমান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিবিসি নিউজ বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী।
বিএসএফ-এর আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা
সীমান্ত সুরক্ষায় বিএসএফ কেবল কাচের বোতল নয়, বরং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং কৌশল ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ইলেকট্রনিক নজরদারি: সীমান্ত এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা, নাইট ভিশন ডিভাইস, এবং থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে। বিবিসি নিউজ বাংলার তথ্য অনুযায়ী।
- ইন্ট্রুডার অ্যালার্ম: কেউ বেড়ায় স্পর্শ করলে সাইরেন বেজে উঠবে বা আলো জ্বলে উঠবে।
- ট্রিপ ফ্লেয়ার: বেড়া ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুবড়ির মতো আলো জ্বলে উঠে চারপাশ ধোঁয়ায় ঢেকে দেবে।
- সিঙ্গল রো ফেন্সিং: যেখানে ত্রিস্তরীয় কাঁটাতার স্থাপন করা সম্ভব নয়, সেখানে এক সারির বেড়া ব্যবহার করা হচ্ছে।
অবৈধ কার্যকলাপ রোধে পদক্ষেপ
সীমান্তে চোরাচালান ও অবৈধ পারাপার ঠেকাতে বিএসএফ ক্রমাগত নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে কাঁটাতারের ওপর নাইলনের জাল বসানোর মাধ্যমে পাচার প্রতিরোধের ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বড় আকারের আলো এবং সরাসরি মনিটরিংয়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষও স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এটি বলা হয়েছে।
কৌশলগত প্রেক্ষাপট
বিএসএফ-এর ভাষ্যমতে, সীমান্ত এলাকাগুলোর ভূগোল এবং স্থানীয় পরিবেশের কারণে সুরক্ষা ব্যবস্থায় ভিন্নতা রাখা আবশ্যক। এই ধরণের পদক্ষেপ স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক। তবে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় এ বিষয়ে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
সীমান্ত সুরক্ষায় কাচের বোতল ঝুলানোর মতো অপ্রচলিত ব্যবস্থা বিতর্ক উসকে দিলেও বিএসএফ এটিকে কার্যকর এবং প্রয়োজনীয় বলে দাবি করেছে। তবে, সীমান্ত এলাকায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বস্তি নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উন্নয়ন করা উচিত।