ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে দ্য প্রিন্টের প্রধান সম্পাদক এবং চেয়ারম্যান শেখর গুপ্তা বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিতে ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক, ড. ইউনূসের নতুন ভূমিকায় দায়িত্ব পালন, এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
চিঠির শুরুতেই শেখর গুপ্তা ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তার নতুন রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দেশে নেতৃত্ব দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। তবে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত মেধা, ধৈর্য এবং সাহসিকতা তাঁকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে বলে তিনি আশাবাদী।
হাসিনা সরকার ও নতুন অধ্যায়ের সূচনা
গুপ্তা চিঠিতে শেখ হাসিনা সরকারের নাটকীয় পতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, ড. ইউনূস তার রাজনৈতিক জীবনের অপ্রত্যাশিত একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন। যদিও ড. ইউনূস নিজেকে কোনো রাজনৈতিক উপাধি দেননি, তবে তার ‘প্রধান উপদেষ্টা’ পরিচিতি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
গুপ্তা প্রশ্ন তুলেছেন, শেখ হাসিনা যেভাবে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক কেড়ে নিয়েছিলেন, ঠিক তেমনভাবেই কি ড. ইউনূস এখন তার সরকার কেড়ে নিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছেন? যদিও তিনি এটিকে কোনো বিচার ছাড়াই উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও মন্তব্য করেন, হাসিনার সরকার জনসমর্থন হারিয়েছিল এবং নির্বাচনী জালিয়াতির কারণে তার পতন ঘটেছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
গুপ্তার মতে, ড. ইউনূসের প্রশাসন একটি পুরনো কৌশল ব্যবহার করছে—ভারতবিরোধিতা। তিনি এটিকে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোনো বড় সমস্যা নেই; বরং তাদের সম্পর্ক ভাগ করা স্বার্থ এবং পারস্পরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
তিনি সতর্ক করেছেন যে, শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাই, নতুন প্রশাসনের ভারতবিরোধী অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
নতুন সংবিধান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গুপ্তা ড. ইউনূসের নতুন সংবিধান প্রণয়নের পরিকল্পনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ইতিহাস এবং রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নতুন সংবিধান দীর্ঘমেয়াদে বৈধতা ধরে রাখতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ড. ইউনূসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও গুপ্তা প্রশ্ন তুলেছেন। উপমহাদেশে অনির্বাচিত নেতাদের সঠিকভাবে অবসর গ্রহণের উদাহরণ বিরল। তিনি জানতে চান, ড. ইউনূস কি নতুন বঙ্গবন্ধু হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে চান, নাকি রাজনৈতিক জীবন শেষে শান্তিতে অবসর গ্রহণ করবেন।
শেখর গুপ্তার এই খোলা চিঠি মূলত ড. ইউনূসের প্রতি শুভেচ্ছা এবং পরামর্শে পরিপূর্ণ। তবে এটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতির একটি গভীর বিশ্লেষণও বটে। ভারত-বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক এবং ড. ইউনূসের প্রশাসনিক দক্ষতা কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে।