কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, অতীত নির্বাচনে সরকারি দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) সহ কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের তদন্ত শুরু হয়েছে। ভোটের রাতে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ এর মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) তরফে এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে, যার ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনবিআর তদন্তে যদি কোনো গুরুতর অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তবে এটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনী অনিয়মের ব্যাপারে যদি জবাবদিহিতা না থাকে, তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আচরণ আরও বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে। সরকারের ওপর জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
অতীতের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঠিক ভূমিকা পালন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে।
ভোটের রাতে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে চলমান তদন্ত গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধ সম্ভব হবে।
সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড তদন্ত: মতবিরোধে বিভ্রান্তি
সমকাল পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, সচিবালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তদন্তে নিয়োজিত দুই সংস্থা পরস্পরবিরোধী মত প্রকাশ করেছে। এক পক্ষ দাবি করছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, অন্য পক্ষের মতে এটি ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্রের ফল।
অগ্নিকাণ্ডের সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে। বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা অচল ছিল, যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের সচিবালয়ে প্রবেশ এবং অগ্নিকাণ্ডের সময় তাদের উপস্থিতি প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার দিকে ইঙ্গিত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই সংস্থার ভিন্নমুখী মতামত তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে পারে। তারা একমত যে, নিরপেক্ষ ও সমন্বিত তদন্ত প্রক্রিয়া নিশ্চিত না করা হলে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা কঠিন হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা। সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রক্ষায় বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এমন অগ্নিকাণ্ড প্রশাসনিক দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা: অর্থনৈতিক স্থায়িত্বের চ্যালেঞ্জ
রাজস্ব ঘাটতি ও বাজেট বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা
বণিক বার্তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেশের বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আহরণের সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে পূর্ববর্তী সরকারের সময় এ প্রবণতা আরও বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বাজেটের ঘাটতি পূরণে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বৈদেশিক ঋণ এবং অনুদানের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি সহায়তা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দেশের অর্থনৈতিক স্থায়িত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
দেশীয় রাজস্ব ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং ট্যাক্স নেটের সীমাবদ্ধতার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন অনেক ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। করজালের আওতা বৃদ্ধির উদ্যোগ সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়নি।
বিদেশি ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে সুদ পরিশোধের বোঝা ক্রমশ বাড়ছে। আগামী অর্থবছরগুলোতে এ বোঝা আরও ভারী হবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন। বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ এবং ঋণ পরিশোধের সময়মতো ব্যবস্থাপনা দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেট বাস্তবায়নে টেকসই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং রাজস্ব আদায়ের কার্যকর পদ্ধতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, বিদেশি সহায়তার সঠিক ব্যবহার এবং ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলো থেকে বেশি উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অর্থনৈতিক স্থায়িত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করে এ সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
সাইবার অপরাধে নারীদের হয়রানি: ডিজিটাল সুরক্ষায় ঘাটতির চিত্র
মানবজমিন পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সাইবার অপরাধের বিভিন্ন রূপ যেমন সাইবার বুলিং, ডক্সিং, ব্ল্যাকমেইলিং ইত্যাদির মাধ্যমে নারীদের প্রতি হয়রানির হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার নারীদের জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
ডক্সিংয়ের মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে হুমকি দেওয়া এবং ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার করার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য হ্যাক করে তা অপব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে মানসিক চাপ এবং সামাজিক নিরাপত্তার হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।
সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেক নারী সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। নেটিজেনদের নেতিবাচক মন্তব্য, অশ্লীল মেসেজ এবং মানহানিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলেও এর কার্যকর প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যথাযথ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপে ধীরগতি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীদের সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি:
সাইবার নিরাপত্তা আইনের কঠোর বাস্তবায়ন।
অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন।
সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষামূলক কর্মসূচি।
ভুক্তভোগীদের জন্য বিশেষায়িত সাপোর্ট সেন্টার এবং সাইবার সেল গঠন।
সাইবার অপরাধে নারীদের ক্রমবর্ধমান হয়রানি আমাদের সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে। এ সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং নারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা জরুরি।
খালেদা জিয়ার বিদেশ গমন: চিকিৎসা নাকি রাজনীতির নতুন অধ্যায়?
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বলে যুগান্তর পত্রিকা জানিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগতে থাকা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল।
খালেদা জিয়ার বিদেশ গমনকে শুধু একটি চিকিৎসা-সংক্রান্ত পদক্ষেপ হিসেবে দেখলে তা পর্যাপ্ত হবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে। বিশেষত, এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত এলো, যখন বিএনপি আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে সক্রিয়।
বিএনপি নেত্রীর বিদেশ গমনের অনুমতি দেওয়া সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর ফলে সরকারের নমনীয়তা প্রদর্শন এবং মানবিকতার বার্তা দেওয়া হতে পারে। তবে, ক্ষমতাসীন দলের সমালোচকদের মতে, এই সিদ্ধান্তে সরকারের কৌশলগত স্বার্থও জড়িত থাকতে পারে।
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা বিএনপির জন্য নতুন রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানের সময় তিনি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মহলে দলীয় এজেন্ডা তুলে ধরার একটি সুযোগও এটি হতে পারে।
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
খালেদা জিয়ার বিদেশ গমন শুধুই চিকিৎসার প্রয়োজন নাকি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের সূচনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এ সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায় এবং আইনের শাসনের চ্যালেঞ্জ
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক রায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। নয়াদিগন্ত ও নিউ এইজ পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। আইন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এমন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত। তবে, এই ধরনের রায় কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গণতান্ত্রিক দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব সকলের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আইনি প্রক্রিয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকার অভিযোগ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের এই রায়ও সেই বিতর্ক থেকে মুক্ত নয়।
এই ধরনের রায় এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। দেশীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ ঘটতে পারে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাতে আরও অস্থিতিশীল না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে এমন রায় আসলে তা জনমনে ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, যদি সেটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়।
বাংলাদেশের জনগণ ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা দেখতে চায়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। একইসঙ্গে, রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা এড়াতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষিত রাখতে সব পক্ষের সংযম প্রয়োজন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজন স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং কার্যকর বিচার ব্যবস্থা। এমন রায় কেবল তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রাজনীতি নয়, ন্যায়বিচারই হোক বিচার ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য।
এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্ক নয়
সম্প্রতি ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নতুন শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস এইচএমপি (হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস) নিয়ে উদ্বেগের কথা উঠে এসেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাস গুরুতর নয় এবং সাধারণ সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে থেকেই সেরে যায়।
বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত সংক্রমণ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করছে, তা কিছুটা বোধগম্য হলেও সব ক্ষেত্রেই আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। এইচএমপিভি নিয়ে বাড়তি উদ্বেগের প্রয়োজন নেই বলে বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। এর উপসর্গগুলো হালকা, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকলে এটি খুব সহজেই সামাল দেওয়া সম্ভব।
তবুও, এমন ভাইরাস নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির পেছনে কিছু কারণ বিদ্যমান। অসচেতন প্রচারণা এবং ভুল তথ্যের বিস্তার পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। সংবাদমাধ্যমের এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক তথ্য ও প্রাসঙ্গিক সতর্কতাগুলো সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা উচিত।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এইচএমপিভি তেমন কোনো গুরুতর শারীরিক জটিলতা তৈরি করে না। শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। তবে, অধিকাংশ সংক্রমণ হালকা উপসর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং বাড়িতে পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
যেকোনো ভাইরাসজনিত সংক্রমণ এড়াতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং জনবহুল স্থান এড়িয়ে চলা।
সুস্থ জীবনযাপন: পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং শরীরচর্চা।
চিকিৎসকের পরামর্শ: উপসর্গ গুরুতর মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জনসচেতনতা গড়ে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্র, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংবাদমাধ্যমের। আতঙ্ক নয়, বরং প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক তথ্যের প্রচার।
এইচএমপিভি-র মতো ভাইরাসগুলো নিয়ে অযথা ভীত না হয়ে সামান্য সতর্কতা মেনে চললেই সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি থাকাই যথেষ্ট।
আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে
আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে প্রথম আলো। নতুন ধান বাজারে আসছে, তবে সেক্ষেত্রে চালের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে মটর চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, মাঝারি চালের দামও কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। তবে, সরু চালের দাম এক সপ্তাহে বাড়েনি, কিন্তু এক মাসের হিসাবে তা দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে।
নতুন সরকারের আশা ছিল, আমন ধান বাজারে আসলে চালের দাম কমবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এক লাখ ১৭ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। তবে, খাদ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ চাল আমদানি করা সম্ভব হয়নি।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার গত ১৪ নভেম্বর আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, “আমন ধান বাজারে এলে চালের দাম আস্তে আস্তে কমবে,” কিন্তু এখনো তা ঘটেনি। নতুন সরকারের উদ্যোগ সত্ত্বেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।এ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘ হলে, দেশের সাধারণ জনগণের জন্য বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রেণির জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হতে পারে।