বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে , কৃষি ও খাদ্য খাতের গুরুত্ব নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি শুধু আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার মূল স্তম্ভ নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। তবুও, আজকের দিনে এই খাতটি অবহেলিত ও সংকটের মুখোমুখি। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, প্রতি বছর খাদ্য ও কৃষি খাতে প্রয়োজন ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নতুন বিনিয়োগ। এর মধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আসতে হবে বেসরকারি খাত থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিনিয়োগের অভাবে কৃষি খাত তার সম্ভাবনার পূর্ণতা পাচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ক্ষুদ্র কৃষকরাই বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদনে অবদান রাখে। অথচ এই কৃষক নিজেরাই সবচেয়ে বেশি অসহায়। উন্নত প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা এবং বাজার সুবিধার অভাবে এই ক্ষুদ্র কৃষকরা অনেক সময় উৎপাদন বজায় রাখতে হিমশিম খায়। এর ফলে, বৈশ্বিক খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
তবে এই সংকট শুধু খাদ্যের অভাবে সীমাবদ্ধ নয়। কৃষি খাত থেকেই আসে বিশ্বের ৩৩ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস। অথচ কৃষিকে সবুজায়ন ও টেকসই করার জন্য যথাযথ নীতিমালা ও বিনিয়োগ এখনও অনুপস্থিত বলে উক্ত রিপোর্টে বলা হয় । এমন পরিস্থিতিতে কৃষি ও খাদ্য খাতকে পুনর্গঠিত করার জন্য বড় পরিসরের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন ।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষি খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। FOLUR Impact Program, PROBLUE AquaInvest Platform, এবং AgResults Initiative এর মতো প্রকল্পগুলো টেকসই উৎপাদন ও বাজার সংযোগে কৃষকদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, আমরা কি বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছি কি আমরা?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অর্থনীতি এখনও কৃষিনির্ভর, এবং দেশের অধিকাংশ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। অথচ ক্ষুদ্র কৃষকরা প্রায়শই আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় প্রয়োজন।
বেসরকারি বিনিয়োগ ছাড়া কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নীতিমালা, যা কৃষকদের ঝুঁকি কমিয়ে তাদের জন্য বিনিয়োগের প্রতি আকর্ষন বাড়াবে। পাশাপাশি, সরকারি প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে বাজারে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি খাতের প্রতি এই উদাসীনতা আর চলতে পারে না, চলা উচিত নয়। খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কৃষিতে টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। এটি শুধু আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে এই খাত তার প্রকৃত সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে।
Trending
- সংরক্ষিত আসনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন কি কি ?
- আনন্দ শোভাযাত্রা: ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার নাকি ইউনেস্কো স্বীকৃতির প্রশ্ন?
- ঢাকায় গাজা ইস্যুতে জনসমুদ্র, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নজর
- ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি কতটা গভীর?
- কোরিয়ান ব্যবসায়ীকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, সম্পর্কে নতুন দিগন্ত?
- নারী নেতৃত্বে কি এবার ভোটের অধিকার আসছে?
- গাজায় গণহত্যা: বাংলাদেশ কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ চায় ?
- ভূমি সেবায় নতুন যুগ , ‘ল্যান্ড সার্ভিস গেইটওয়ে’ কি নাগরিকদের ভোগান্তি কমাবে?