আসাদ ও তার পরিবারের জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারকে যখন উৎখাত করা হলো তখন সেটা শুধু তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ শাসনের ২৪ বছর নয়, বরং তার পরিবারের ৫০ বছরের শাসনের অবসান হলো।
দুই হাজার সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তারা বাবা হাফিজ আল আসাদ তিন দশক দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এখন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করছে। আর একই সাথে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ।
তারা এখন রাশিয়ায়। সেখানে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য?
আসাদের স্ত্রী আসমা ব্রিটেন ও সিরিয়ার দ্বৈত নাগরিক। তার বাবা-মা সিরিয়ান হলেও তিনি জন্মেছেন ও বড় হয়েছেন পশ্চিম লন্ডনে। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হওয়ার আগে তিনি লন্ডনেই স্কুল ও ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেছেন।
তিনি ২০০০ সালে পাকাপাকিভাবে সিরিয়ায় চলে আসেন এবং আসাদকে বিয়ে করেন। মি. আসাদ তার আগেই পিতার মৃত্যুজনিত কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
ডঃ নাসরিন আলরেফাই লন্ডন স্কুল অফ ইকনোমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সেস এর ভিজিটিং ফেলো। তিনি বিবিসি নিউজকে বলেছেন ‘আসমার ব্রিটিশ পাসপোর্ট আছে। সুতরাং তিনি রাশিয়ায় না থেকে যুক্তরাজ্যেও ফিরতে পারবেন’।
“তবে যুক্তরাষ্ট্র তার বাবা ডঃ ফাওয়াজ আল-আখরাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তিনিও রাশিয়ায় আছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে,” বলছিলেন তিনি। তবে তার মতে আসমা এখন হয়তো রাশিয়াতেই থাকতে চাইবেন।
মেইল অনলাইনের এক খবরে প্রতিবেশীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে আসমার বাবা একজন কার্ডিওলজিস্ট আর মা সাহার একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক। তারা মস্কোতেই অবস্থান করতে চেয়েছেন যাতে করে এ সময় তাদের মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের পাশে থাকতে পারেন।
আসাদ দম্পতির তিন সন্তান: হাফিজ, জেইন আর কারিম।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ২০২২ সালে কংগ্রেসে দেয়া এক রিপোর্টে বলেছিলো যে আসাদ পরিবারের এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে। যদিও মনে রাখতে হবে যে এটা হিসেব করা কঠিন। কারণ তাদের সম্পদ বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট প্রোপার্টি, করপোরেশন কিংবা অফশোর কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
আসাদ বিচারের মুখোমুখি হবেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয় ,আসাদের পতনের পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব বলেছেন সিরিয়ার মানুষ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্বীকার হয়েছে এবং এর ফলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় হয়েছে।
এর মধ্যে আছে “রাসায়নিক অস্ত্র ও ব্যারেল বোমা হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাপরাধ। এর সাথে ছিলো হত্যা, নির্যাতন, গুম, খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ”।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয় , তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সিরিয়ার ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের নেতা বলেছেন রাজনৈতিক বন্দিদের যারা নির্যাতন করেছে তাদের নাম তারা প্রকাশ করবেন।
আসাদ রাশিয়া ছেড়ে অন্য কোন দেশে যাবেন না, যেখান থেকে তাকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর সুযোগ আছে বা তাকে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করার সুযোগ হতে পারে।