আসিফ নজরুলের পোস্টে উঠে এসেছে ভারতের আইনি সংস্কারের সমালোচনা

ভারত সরকার সম্প্রতি মুসলমানদের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা সংক্রান্ত একটি নতুন আইন পাস করেছে, যা দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার বিধান এবং সরকারের তদারকির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই বিষয়ে একটি পোস্ট প্রকাশ করেছেন, যা আজ, ৬ এপ্রিল ২০২৫, প্রকাশিত হয়েছে।

আসিফ নজরুল তার পোস্টে প্রথমে উল্লেখ করেছেন, “ভারতে মোদী সরকার মুসলমান বিরোধী আরো একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন আইন পাস করে তারা মুসলমানদের ‘ওয়াক্‌ফ’ সম্পত্তি পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিমদেরও রাখার এবং এসব সম্পত্তিতে সরকারের সরাসরি খবরদারীত্বের বিধান করেছে।” তিনি এই পদক্ষেপকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। ভারত সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির একটি প্রচেষ্টা বলে ব্যাখ্যা করা হলেও, এই আইনের সমালোচকরা এটিকে ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করছেন।

তিনি আরও যোগ করেছেন, “এই আইন ব্যবহার করে পুরোনো মসজিদসহ মুসলমানদের বহু ঐতিহাসিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।” এই উদ্বেগ ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে, যারা এই আইনকে তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে ভারত সরকার এখনও এই অভিযোগের বিপরীতে বিস্তারিত কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব প্রকাশ করেনি।

আসিফ নজরুল তার পোস্টে একটি তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, “উল্লেখ্য ভারতে হিন্দু মন্দির পরিচালনা কমিটিতে অন্য ধর্মাবলম্বীরা স্থান পান না। এই প্রশ্ন সেখানে উঠেছে যে, ওয়াক্‌ফ বোর্ডে তাহলে অমুসলিমদের রাখা হবে কেন?” এই প্রশ্নটি ভারতের ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় নীতিগত সামঞ্জস্যতা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। সমালোচকদের মতে, এটি সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের ইঙ্গিত বহন করে।

তিনি তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছেন, “এই আইন ভারতে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর ক্রমাগত বৈষম্য ও নিপীড়নের আরেকটি অধ্যায় রচনা করবে।” এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, যা দেশটির বিরোধী দল ও সংখ্যালঘু নেতাদের মধ্যেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তবে ভারত সরকার বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

সবশেষে, আসিফ নজরুল একটি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট টেনে এনে বলেন, “পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এরাই আবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ভূয়া অভিযোগ তুলে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে।” এই মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে পারস্পরিক অভিযোগের বিষয়টিকে সামনে এনেছে, যা কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হতে পারে।

ভারতের এই আইনি সংস্কারকে ঘিরে উভয় পক্ষের যুক্তি ও উদ্বেগ বিবেচনায় রেখে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই বিষয়ে নজর রাখছে, এবং আগামী দিনে এর বাস্তবায়ন কীভাবে এগোয়, তা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version