২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎ ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রথম মুখোমুখি আলোচনা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি এই বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে এমন বক্তব্য বা “বিষোদ্গার” এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এই মন্তব্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এসেছে, যেখানে তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে “ভূমিবেষ্টিত” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। মোদি এই ধরনের মন্তব্যকে সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে, ইউনূস ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি তুলেছেন। এই দুটি বিষয়ই বৈঠকের কেন্দ্রীয় আলোচনার অংশ ছিল।

আল জাজিরা উল্লেখ করেছে, এটি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। এই প্রেক্ষাপটে বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, মোদি ইউনূসকে বলেছেন যে, “যে কোনো বিষোদ্গার যা পরিবেশকে বিঘ্নিত করে তা এড়ানো উচিত।” এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে ইউনূসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, বৈঠকের সময় মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ১০ বছর আগের একটি ছবি উপহার দিয়েছেন, যেখানে দুজন একসঙ্গে ছিলেন। এই অঙ্গভঙ্গি দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ইতিহাসকে স্মরণ করার প্রয়াস হিসেবে দেখা হয়েছে।

ইনশোর্টস এই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে বলেছে, এই উপহারটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইতিবাচক সুর সৃষ্টির প্রচেষ্টা হতে পারে।

জি নিউজ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোদি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও জনকেন্দ্রিক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, এই বৈঠক শেখ হাসিনার পতনের পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সরাসরি আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা ট্রিবিউন উল্লেখ করেছে, বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, “ইউনূস-মোদি আলোচনা দুই দেশের জনগণের জন্য উপকারী হবে।” এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের আশাবাদকে প্রতিফলিত করে।

ডেইলি সান প্রতিবেদনে এই সাক্ষাৎকে “একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত” হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা মনে করে, এটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিক নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।

ডেইলি অবজারভার জানিয়েছে, ইউনূস মোদিকে বলেছেন যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বেশিরভাগ প্রতিবেদন “মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত”। তিনি এই বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রশমনের চেষ্টা করেছেন।

দ্য ওয়্যার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি জোরালোভাবে তুলেছে, যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। অন্যদিকে, ভারত সংখ্যালঘু ইস্যুতে জোর দিয়েছে। এই দুটি বিষয় বৈঠকের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, মোদি ইউনূসকে “সম্পর্কের গঠনমূলক পরিবেশকে বিঘ্নিত করে এমন বক্তব্য এড়ানোর” পরামর্শ দিয়েছেন। এটি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্ট করে।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতার তদন্তের জন্য ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এটি ভারতের অগ্রাধিকারকে প্রতিফলিত করে।

দ্য ইকোনমিক টাইমস দুই দিন আগে জানিয়েছিল, মোদি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ইউনূস এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। এটি আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে।

মডার্ন ঘানা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই “করিডোর কূটনীতি” ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন রূপ দিতে পারে। তারা এটিকে একটি সম্ভাবনাময় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

এই বৈঠক ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা কমানোর একটি সুযোগ হিসেবে কাজ করতে পারে। সোময় নিউজ জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বৈঠক শেষে ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরেছেন। বৈঠকে উত্থাপিত বিষয়গুলো—সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ—দুই দেশের সম্পর্কের দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে এই আলোচনার ফলাফল কীভাবে প্রকাশ পায়, তা দুই দেশের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version