মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি ঘোষিত শুল্ক নীতি বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। এই নীতির ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর দেশগুলোর উপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র আইন, যেমন প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এবং প্রেস কাউন্সিল আইন, ১৯৭৪, এবং সাংবাদিকতার নৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করে এই প্রতিবেদনে শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবসম্মত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। নিচে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হলো।

আইফোনের দাম বাড়তে পারে ?

‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে আইফোনের মতো জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে আইফোনের দাম ২,৩০০ ডলার পর্যন্ত ছুঁতে পারে। এর কারণ হিসেবে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে, যেহেতু অ্যাপলের বেশিরভাগ উৎপাদন চীনে হয়। এই দাম বৃদ্ধি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের মতো দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে আমদানি করা ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা রয়েছে।

শুল্কের প্রভাব কার উপর কতটা?

‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’-এর একটি প্রতিবেদনে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিভিন্ন দেশের উপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে পারে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতি গ্রহণ করেছে। তবে, বাংলাদেশ সরকার এই শুল্ক হার যৌক্তিক করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শেয়ারবাজারে ধস ও মন্দার আশঙ্কা দেখা যায় কি  ?

‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজার থেকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ উধাও হয়ে গেছে। এই ঘটনা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৫ শতাংশ, ন্যাসড্যাক ১.৪ শতাংশ, জাপানের নিকেই ২২৫ সূচক ৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক ৩ শতাংশ নিচে নেমেছে। এই অস্থিরতা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ বৈশ্বিক বাজারের স্থিতিশীলতা রপ্তানি ও বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে।

রপ্তানির তুলনায় আমদানি কেমন ?

‘প্রথম আলো’-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আমদানির তুলনায় চার গুণ বেশি। এই তথ্য ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হানের মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

ভারতের উদ্বেগ ও কৌশলগত সম্পর্ক কেমন হবে ?

‘বিবিসি বাংলা’-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ভারতের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের আমদানি শুল্ক গড়ে ১৮ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। তবে, ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক এই প্রভাব কিছুটা কমাতে পারে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত সম্প্রতি মার্কিন অভিবাসীদের ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে পারে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যও শিক্ষণীয়, কারণ কূটনৈতিক সম্পর্ক শুল্ক সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ইউরোপ ও ভারতে শুল্ক আরোপ কেমন ?

‘দৈনিক জনকণ্ঠ’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ২ এপ্রিল থেকে ভারত ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই নীতিকে তিনি ‘স্বাধীনতার দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, চীনের পণ্যের উপর ২০ শতাংশ এবং কানাডা ও মেক্সিকোর উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ইতিমধ্যে কার্যকর রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন এর বিরোধিতা করে বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

‘দ্য ডেইলি স্টার বাংলা’-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা একটি গাড়ির দাম ৫০ হাজার ডলার হলে ২৫ শতাংশ শুল্কের কারণে ক্রেতাকে অতিরিক্ত ১২,৫০০ ডলার গুণতে হবে। এই বাড়তি খরচ মার্কিন ভোক্তাদের পকেট থেকেই যাবে। বাংলাদেশে আমদানি করা গাড়ির ক্ষেত্রেও এই প্রভাব পড়তে পারে, যদি বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি পা

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বাংলাদেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ ও ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এর প্রতিবেদন থেকে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়। ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ ও ‘প্রথম আলো’ বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ঝুঁকির কথা তুলে ধরেছে। ‘বিবিসি বাংলা’ ও ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব ব্যাখ্যা করেছে। বাংলাদেশের জন্য এখন কৌশলগত পরিকল্পনা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version