মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের রিভিউ আবেদনের শুনানি আবারও পিছিয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, আদালতের কার্যতালিকা ও সময়সীমার কারণে তা স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনজীবীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপডেট প্রকাশ করেছে, যা জনমনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শুনানি পেছানোর পটভূমি কি ?
এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন জমা দেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এই আবেদনের শুনানির জন্য কার্যতালিকায় স্থান পাওয়া শুরু হয়। প্রথমে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শুনানির সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু সেদিন আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তা পিছিয়ে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নির্ধারিত হয়। তবে আজও শুনানি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি আইনজীবী দল এই মামলায় আজহারের পক্ষে কাজ করছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষার সময় মামলাটি কার্যতালিকার ৯ নম্বরে ছিল। কিন্তু আদালত ৫ নম্বর আইটেম পর্যন্ত শুনানি শেষ করে দিনের কার্যক্রম মুলতবি করে দেয়। আজও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই ঘটনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে। ‘সময় টিভি’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের রিভিউ আবেদনের শুনানি আজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।” তবে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তারা পরবর্তী আপডেটে নিশ্চিত করেছে।
আইনজীবীদের বক্তব্য কি ?
এটিএম আজহারের পক্ষে আইনি লড়াই পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট শিশির মনির গত ২২ ফেব্রুয়ারি একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন, “জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ভাইয়ের রিভিউ আবেদনের শুনানি আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি, ইনশাআল্লাহ।” তবে আজ শুনানি না হওয়ায় তিনি এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। আইনজীবী দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালতের ব্যস্ততা এবং কার্যতালিকার চাপের কারণে এমনটি ঘটেছে। তারা পরবর্তী তারিখের জন্য অপেক্ষা করছেন।
জনমত ও প্রতিক্রিয়া কি কি ?
এই মামলা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমর্থকরা মনে করছেন, এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে রায়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ পাওয়া উচিত। সামাজিক যোগাশ্রয়ে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ভাইয়ের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ রহম করুন।” অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেকে এই রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আসছেন।
আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ কি ?
বিচার বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য নতুন তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। তবে আদালতের কার্যতালিকার ওপর এটি নির্ভর করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মামলায় শুনানি পিছিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়, কারণ আপিল বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ মামলার চাপ প্রায়ই বেশি থাকে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কি ?
এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের পর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের পর থেকে তার সমর্থকরা এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন ।
এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদনের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় মামলাটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। আগামী দিনে আদালতের সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন সুপ্রিম কোর্টের দিকে। এই মামলার ফলাফল শুধু আজহারের ভাগ্যই নির্ধারণ করবে না, বরং দেশের বিচার ব্যবস্থা ও ঐতিহাসিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।