ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে দেশের সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গত সোমবার রাতে রাজশাহীগামী একটি বাসে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নানা তথ্য, যা জনমনে উদ্বেগ আর আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন জানিয়েছে, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায়, যেখানে ডাকাতরা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন লুট করে এবং নারী যাত্রীদের উপর নির্যাতন চালায়।
প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ঘটনার পর মির্জাপুর থানার একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দায়িত্বে অবহেলার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন। তারা আরও জানায়, ঘটনার তিন দিন পর শুক্রবার ভোরে বাসের এক যাত্রী ওমর আলী নামে এক ব্যক্তি মামলা দায়ের করেন। তবে মামলার এজাহারে শ্লীলতাহানির কথা উল্লেখ থাকলেও ধর্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
দ্য ডেইলি স্টার ইংরেজিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন এবং দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা সাসপেন্ড হয়েছেন। তারা ঘটনাটিকে “ডাকাতি ও যৌন নির্যাতন” হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে যাত্রীদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ডাকাতরা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে লুটপাট চালায়।
অন্যদিকে, দৈনিক ইত্তেফাক একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। তাদের খবরে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, বাসে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে শ্লীলতাহানির আলামত পাওয়া গেছে, কিন্তু ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি।” এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনে দুই যাত্রীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছে। তারা দাবি করেছেন, অন্তত একজন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। একজন যাত্রী বলেন, “বাসের পেছনে দুই নারীকে নিয়ে গিয়ে ডাকাতরা জোরপূর্বক নির্যাতন চালায়। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের মারধর করা হয়।” স্থানীয় সাংবাদিকদের বরাতে তারা আরও জানায়, বেশ কয়েকজন নারী যাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন।
এদিকে, নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার কাছে বাসটি আটকের পর চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু মামলার বাদী ওমর আলী অভিযোগ করেছেন, “চালক ও তার সহযোগীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা আসামি হওয়ার কথা, কিন্তু তারাই মামলা করতে থানায় বসে আছে।”
সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে একটি বিষয় স্পষ্ট—এ ঘটনা দেশের গণপরিবহনে নিরাপত্তার অবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে রাতের বাসে নারী যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে অনেকে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং আরও আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে জনমনে যেমন ক্ষোভ রয়েছে, তেমনি সরকারের কাছে গণপরিবহনে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি উঠেছে। আগামী দিনে তদন্তে কী বেরিয়ে আসে, সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই।