শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পার না হতেই হরতালসহ পাঁচ দফা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল, ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। কেউ কেউ এটিকে ‘অনুশোচনাহীন রাজনীতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, আবার কেউ বলছেন, বিচার ও ক্ষমা চাওয়ার আগে আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়া হবে না।

কালবেলা অনলাইন-এর খবরে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “সরকার পতনের ছয় মাস যেতে না যেতেই আওয়ামী লীগ কীভাবে কর্মসূচি দেয়?” বুধবার সকালে কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আয়োজিত এক প্রদর্শনী পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, “২৪-এর সবচেয়ে বড় হায়েনা যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এত মানুষ হত্যার পরও শেখ হাসিনা কীভাবে কর্মসূচি দেয়?”

এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ‘অনুশোচনাহীন এক নারীর আর্তচিৎকার’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিডি প্রতিদিন-এর খবরে বলা হয়েছে, শহীদ আহনাফের বাসায় বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে গিয়ে রিজভী বলেন, এতগুলো মানুষ হত্যা করার পর এটা অনুশোচনাহীন এক নারীর আর্তচিৎকার ছাড়া কিছুই নয়। শেখ হাসিনার নির্দেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আহনাফকে হত্যা করেছে। পুরস্কারের লোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই কাজ করেছে।”,

সরকারের পক্ষ থেকেও কঠোর বার্তা এসেছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “বাংলাদেশে যতদিন না আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বিচার ও ক্ষমা চাচ্ছে, ততদিন তাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।” তিনি আরও বলেন, “এতবড় একটা হত্যাকাণ্ড হয়েছে। শত শত তরুণ মারা গেছে, অনেকে অন্ধ হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। অথচ তারা (আওয়ামী লীগ) আবার হরতালের ডাক দিচ্ছে! এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের টপ লিডারশিপ জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) রিপোর্টের ১৭তম পাতায় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

এর আগে, জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার পর ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও গুম-খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনার ফলে সামনে আরও উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version