রেল কর্মবিরতিতে যাত্রী ভোগান্তি: বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বিআরটিসি বাস চালু

 বাংলাদেশ জুড়ে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, গাজীপুর, ঠাকুরগাঁও, ও জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন স্টেশনে  যাত্রীরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  নির্ধারিত রুটগুলোতে চলাচল সম্পূর্ণ স্থগিত রয়েছে এবং কর্মবিরতির কারণে অনেক ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে । বিকল্প ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিআরটিসি বাসে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলের টিকেটে বিআরটিসি বাসে যাত্রী পরিবহন শুরু

প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনের টিকিটধারী যাত্রীদের বিআরটিসি বাসে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ছয়টি বাস চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিআরটিসি বাসে ট্রেনের সময়সূচি অনুসরণ করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের বিআরটিসি ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার আলী প্রথম আলোকে বলেন, “রেলের সময়সূচি অনুযায়ী বাস ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপাতত কেবল টিকিটধারী যাত্রীরাই এই সুবিধা পাচ্ছেন। যতক্ষণ ধর্মঘট চলবে, এই বিকল্প ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।”

খুলনায় যাত্রা স্থগিত: টিকিট ফেরত দেওয়া হচ্ছে

খুলনা থেকে সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। জাগো নিউজ জানায়, খুলনা স্টেশনে শত শত যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরে যাচ্ছেন। স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন জানান, “যেসব যাত্রীরা অগ্রিম টিকিট কিনেছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। স্টেশনে কোনো ভিড় নেই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”

ঠাকুরগাঁও ও জয়পুরহাটে হতাশ যাত্রীরা

দ্য ডেইলি স্টার জানায়, ঠাকুরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পূর্ব নোটিশ ছাড়া কর্মবিরতি ঘোষণা করায় তাঁরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ পাননি। ঠাকুরগাঁওয়ের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, “যদি ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে, তবে অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ করা হয়নি কেন?”

জয়পুরহাটে ট্রেনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা ফরিদা আখতার বলেন, “শিশুসন্তান নিয়ে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসে শুনি, ট্রেন চলবে না। এখন সড়কপথে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।”

গাজীপুরে অতিরিক্ত ভাড়া ও দুর্ভোগ

গাজীপুরের জয়দেবপুর জংশনে যাত্রীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সড়কপথে যেতে হচ্ছে। স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, “কর্মবিরতি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।”

কর্মবিরতির পেছনের কারণ

  প্রথম আলো’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, রানিং স্টাফদের মূল দাবি হচ্ছে মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল। কর্মবিরতির ফলে ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটিই) দেখা যাচ্ছে না, যার কারণে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্থগিত।

বাসে বাড়তি চাপ ও সময় ক্ষেপণ

জাগো নিউজ জানায়, খুলনা থেকে অনেক যাত্রী দূরবর্তী গন্তব্যে যেতে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে ভিড় করছেন। তবে বাসের ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেকেই ট্রেন পুনরায় চালুর অপেক্ষায় আছেন।

এই কর্মবিরতির ফলে সারাদেশে মালবাহী ট্রেন চলাচলও স্থগিত রয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের তথ্য মতে, মালবাহী ট্রেনের স্থগিত থাকার কারণে পণ্য পরিবহনে সময় বিলম্ব হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি কবে শেষ হবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম আলো, জাগো নিউজ, এবং দ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টগুলো প্রমাণ করে, যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version