সংবিধান সংস্কার কমিশন দেশের আইনসভার কাঠামো এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিশন জাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছরে নির্ধারণ এবং প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সীমা আরোপের সুপারিশ করেছেন।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব
প্রতিবেদনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হবে নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) এবং আরেকটি উচ্চকক্ষ (সিনেট)। উভয় কক্ষের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নিম্নকক্ষ গঠন করা হবে ৪০০ সদস্য নিয়ে। এর মধ্যে ৩০০ জন একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থীরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।

উচ্চকক্ষের গঠন পদ্ধতি
উচ্চকক্ষে ১০৫ জন সদস্য থাকবেন। এর মধ্যে ১০০ জন সদস্য রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাওয়া মোট ভোটের অনুপাতে নির্ধারিত হবেন। বাকি ৫টি আসনে রাষ্ট্রপতি নাগরিক সমাজ থেকে প্রতিনিধি মনোনীত করবেন।

প্রধানমন্ত্রী পদের সীমা
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তিনি একাধারে বা ভিন্নভাবে এই দায়িত্ব পালন করুন না কেন, এই সীমা সমভাবে প্রযোজ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

নির্বাচনসংক্রান্ত পরিবর্তন
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর থেকে কমিয়ে ২১ বছর করার সুপারিশ করেছে।

রাষ্ট্রপতি পদের সুপারিশ
রাষ্ট্রপতির মেয়াদ চার বছর এবং সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সীমা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে।

অতিরিক্ত সুপারিশ

  • সংসদে বিরোধীদলীয় ভূমিকা জোরদার করা।
  • স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব বিরোধী দলের সদস্যদের হাতে অর্পণ।
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের প্রার্থীদের অন্তত ১০ শতাংশ তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version