ডোনাল্ড ট্রাম্প, একজন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তাঁর ভাষণ এবং বক্তব্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো শুধু বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তা নয়, এটি একটি বিপজ্জনক বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্প যখন বলছেন যে, প্রয়োজনে তিনি গ্রিনল্যান্ড, প্যানামা এবং কানাডাকে সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণে আনবেন, তখন তা কোনো সাধারণ বাচালতা নয়। এটি তাঁর একনায়কত্বের লক্ষ্যে স্পষ্ট পদক্ষেপের একটি অংশ।
ট্রাম্পের ভাষার মধ্যে যে ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাব ফুটে উঠেছে, তা আসলে তাঁর শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি প্রায়শই বিক্ষোভী এবং উন্মাদ কৌশলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করতে চান। কিন্তু এবার, বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। তিনি নিজে সাফ জানিয়েছেন, “আমরা যদি চাই, আমরা সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারি,”– যা তার নেতিবাচক ভাবনাকে আরও জোরালো করে তোলে।
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ তাঁর কথাগুলিকে নেহাতই এক ধরনের নিছক ঠাট্টা মনে করলেও, কানাডা, প্যানামা বা গ্রিনল্যান্ডের মত দেশগুলোর জন্য বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ট্রাম্পের কথাবার্তা শুধুমাত্র বুলির মতো নয়, এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। যে ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায় না, সে কীভাবে অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করতে পিছপা হবে? বিশেষ করে যখন সে বলে, “আমরা অর্থনৈতিক শক্তির মাধ্যমে কানাডাকে ৫১তম রাজ্যে পরিণত করতে পারি,” তখন বিষয়টি আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।
এখানে একটি মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে: আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এই ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাব থেকে? কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বা প্রিমিয়ার অ্যান্ড্রু ফিউরি যেমন মন্তব্য করেছেন, “এটি শুধু এক ধরনের মজা নয়, বরং বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাওয়া একটি পরিকল্পনা,”। আমাদের অবশ্যই এ ধরনের ভাষণ এবং বিপজ্জনক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সংহতির মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, যাতে ট্রাম্পের ক্ষমতার অপব্যবহার শুধুমাত্র মূর্খতায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা কার্যকর পদক্ষেপের রূপ না নেয়।
আজকের পৃথিবীতে, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব আর গ্লোবাল কৌশলগত নিরাপত্তা কোনো বিক্ষিপ্ত আলোচনা নয়। একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখা, তার জনগণের জন্য একটি মৌলিক অধিকার। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত হুমকিগুলি শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টি করার একটি গভীর পরিকল্পনা হতে পারে। এসব সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়া এবং যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা আজকের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এখন সময় এসেছে, বিশ্বকে একত্রিত হওয়ার এবং একনায়কত্বের বিরুদ্ধে আমাদের একতাবদ্ধ অবস্থান স্পষ্ট করার। কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে জানি, এবং এর জন্য যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত।” সেই সম্মানজনক অবস্থানটি আমাদেরও গ্রহণ করতে হবে, না হলে আমাদের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
আল জাজিরা কলামিস্ট অ্যান্ড্রু মিত্রোভিকা-এর লেখা কলাম থেকে নেওয়া ।
অ্যান্ড্রু মিত্রোভিকা হলেন আল জাজিরার একজন কলামিস্ট, যিনি টরন্টোতে বসবাস করেন।
“এই প্রবন্ধের মধ্যে যে মতামত প্রকাশ করা হয়েছে তা লেখকের নিজস্ব এবং আল জাজিরার সম্পাদকীয় অবস্থানকে প্রতিফলিত নাও করতে পারে।”