বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং বিকল্পধারার নেতা মাহি বি চৌধুরী তার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বার্তায় তারা এ শুভকামনা জানান।
জিএম কাদের তার বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন। তিনি বলেন, “দেশ ও জনগণের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর রহমতে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন বলে আমি আশা করি।”
অন্যদিকে, মাহি বি চৌধুরী তার বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাত্রাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক বিভেদ সত্ত্বেও এই মুহূর্তটি আমার হৃদয়ে শান্তি এনে দিয়েছে। প্রার্থনা করি, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দমুখর সময় কাটানোর সুযোগ পান।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় জিএম কাদের ও মাহি বি চৌধুরীর এই বার্তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই তাদের এই শুভকামনাকে কপট আচরণ হিসেবে দেখছেন। কিছু নেটিজেন মন্তব্য করেছেন যে, “যে নেতারা অতীতে ক্ষমতাসীন দলের সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন, তারা এখন মানবিকতা দেখিয়ে কৃত্রিম সমবেদনা প্রকাশ করছেন।”
সমালোচকরা বলছেন, জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অতীতে একাধিক বিতর্কিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে শেখ হাসিনার সরকারকে শক্তিশালী করেছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে জনগণের ভোটাধিকার উপেক্ষা করেছে।
মাহি বি চৌধুরী সম্পর্কেও অনুরূপ সমালোচনা উঠে এসেছে। বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিকল্পধারা শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক চুক্তি করেছিল। বিনিময়ে তারা জাতীয় সংসদে আসন পেয়েছিল, যা পরে আওয়ামী লীগ অগ্রাহ্য করে।
গত ১৫ বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলনের কারণে তাকে কারাবাসে যেতে হয়েছে। এমনকি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে এ সময় জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার নেতাদের তেমন কোনো সমর্থন দেখা যায়নি।
অনেকেই জিএম কাদের ও মাহি বি চৌধুরীর এই শুভকামনাকে “মাছের মায়ের পুত্রশোক” হিসেবে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ, কপট বেদনা প্রকাশ বা ভণ্ডামির ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রবাদটি বোঝায়, কেউ অন্যের ক্ষতি করে পরে দুঃখপ্রকাশ করলে সেটি আসল দুঃখ নয়।
বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনৈতিক বিভেদ সত্ত্বেও শুভকামনা জানানোর এই ঘটনা মানবিক দিক থেকে ইতিবাচক হলেও অতীত রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের শুভকামনা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দ্বিচারিতার একটি প্রতিফলন।
তথ্যসূত্র: গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া।