বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রাংশের ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এটি দেশের কৃষি খাতের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষির অগ্রগতি ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য কৃষি যন্ত্রাংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তবে আমদানিনির্ভরতার কারণে তা একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, অন্যদিকে কৃষকদের জন্য খরচ বাড়ায়। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সত্ত্বেও নানা সংকটের কারণে কৃষি যন্ত্র উৎপাদন খাতের যথাযথ বিকাশ ঘটছে না।
বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল, তবে সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে কয়েকটি বড় বাধা রয়েছে। প্রথমত, প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত যন্ত্রপাতির অভাব, যার কারণে স্থানীয় উৎপাদন খাত উন্নত করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, পুঁজি ও বিনিয়োগের অভাব, যা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বড় বাধা। এসব সমস্যা মোকাবিলা না করলে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না এবং কৃষি খাতে আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়তেই থাকবে।
তবে, সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে কৃষি যন্ত্র উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষি যন্ত্র উৎপাদন খাতে স্বল্প সুদের ঋণ প্রদান, এবং রফতানি সহায়তা প্রদান করা হলে কৃষি যন্ত্রাংশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া, কৃষকদের মধ্যে এসব যন্ত্রের ব্যবহার প্রচলন করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব।
এভাবে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো গেলে আমদানির চাপ কমে আসবে, যা বাংলাদেশের কৃষি খাতে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভূমিকা বড় হতে পারে, যদি সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার: উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির চাবিকাঠি
বাংলাদেশের কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে একটি অপরিহার্য বিষয়। বার্তা২৪ ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষিকে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত করতে হবে, যাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হয়। প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের কৃষিকাজে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে, যেমন ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, উন্নত বীজ নির্বাচন, পানি ব্যবস্থাপনা, এবং সঠিক সময়মতো ফসলের পরিচর্যা। এ সকল প্রযুক্তি কৃষকদের সময় ও খরচ সাশ্রয় করতে সাহায্য করে, যার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বব্যাপী কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও তার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। দেশে কৃষি প্রযুক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবন, যেমন মেশিনলেস চাষাবাদ, ড্রোনের মাধ্যমে চাষাবাদ পর্যবেক্ষণ, এবং উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষির গুণগতমান বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সরকার ও বেসরকারি খাতকে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের হ্রাস ও কীটনাশকের ব্যবহার: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি
বাংলাদেশে কৃষির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়ছে, যা বিশেষত বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকট তৈরি করছে। যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি উৎপাদনের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার বাড়ানোর ফলে সেখানে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে করে ভবিষ্যতে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক হতে পারে।
অন্যদিকে, কৃষি জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কীটনাশকগুলো সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হলে তা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কীটনাশকের বিষাক্ত প্রভাব শুধু মাটির উর্বরতা কমায় না, বরং মানুষের শরীরে এসব রাসায়নিকের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, ভূগর্ভস্থ পানির সঠিক ব্যবহারের জন্য সরকারী উদ্যোগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও তীব্র না হয়।