বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় গত শনিবার (১২ এপ্রিল ২০২৫) প্রায় এক লক্ষ মানুষ জড়ো হয়ে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এই প্রতিবাদের ব্যাপকতা এবং প্রতীকী কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে।
কোথায় এবং কারা এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল?
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভটি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশে অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ‘ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং শত শত ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শন করেন।
এপি আরও জানায়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন এই বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করে।
বিক্ষোভের প্রতীকী রূপ কি কি ছিলো ?
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-এর ছবি বহন করেন এবং তা প্রতীকীভাবে আঘাত করেন। এপি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তারা এই নেতাদের ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
এছাড়া বিক্ষোভকারীরা প্রতীকী কফিন ও মৃতদেহের প্যাকেট বহন করেন যা গাজায় নিহত বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস)
আল জাজিরার প্রতিক্রিয়া
আল জাজিরা ১৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, “কমপক্ষে ১ লাখ মানুষ ঢাকার রাস্তায় নেমে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।” এই প্রতিবেদনটি তাদের “NewsFeed” বিভাগে প্রকাশিত হয়, এবং সেখানে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য ছিল “ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসনের অবসান দাবি করা।”
এপি এবং টাইমস অব ইসরায়েল উভয় সংবাদমাধ্যমেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। দেশটি ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি এবং দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন
টাইমস অব ইসরায়েল ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “প্রায় ১ লাখ বিক্ষোভকারী ঢাকায় জড়ো হয়ে গাজার যুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। তারা নেতানিয়াহু ও তার মিত্রদের ছবি বহন করে এবং সেগুলিতে আঘাত হানে।”
তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এই আন্দোলনটি ছিল শান্তিপূর্ণ, তবে প্রতীকীভাবে তীব্র প্রতিবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের একটি প্রচেষ্টা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া-র দল এই বিক্ষোভে সরাসরি সংহতি প্রকাশ করেছে, যদিও দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে উল্লিখিত হয়নি।
বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল ও সামাজিক সংগঠন গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এই বিক্ষোভ বাংলাদেশের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক মানবিক ইস্যুতে সচেতনতার এবং নৈতিক অবস্থান প্রকাশের একটি নিদর্শন হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এই প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক মহলে কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে তা সময়ই বলে দেবে।
তথ্যসূত্র:- অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (প্রতিবেদন ও ছবি: মাহমুদ হোসেন অপু)- আল জাজিরা (NewsFeed, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)- টাইমস অব ইসরায়েল (লাইভব্লগ বিভাগ, ১২ এপ্রিল ২০২৫)