বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। এই পোস্টটি লিখেছেন প্রিসিলা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত একজন তৃতীয় বর্ষের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী এবং সাংবাদিকতা ও রাজনীতি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তাঁর এই পোস্টে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি, বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রিসিলা তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “কিভাবে বিপদে পা দিচ্ছে বিএনপি? ড. মুহাম্মদ ইউনুস কি নির্বাচন দেবেন? ড. মুহাম্মদ ইউনুস কি মিথ্যা বলছেন? তাহলে বিএনপি কেন ভয় পাচ্ছে? আপনি কি মনে করেন বিএনপি’র কারণে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে? এই ক্ষমতা তাদের ছিল? এত শক্তিশালী ছিল বিএনপি? আওয়ামীলীগের কাছে এত নির্যাতনের পরও কেন বিএনপি আওয়ামীলীগকে নির্বাচনে পাশে চাইছে? কেন তাদের পুনর্বাসনে ব্যস্ত? শুধু কি টাকা? নাকি ভারতীয় চাপ ও সম্পর্ক? দেশের মানুষ কি বুঝতে পারছে বিষয়টা?” তিনি এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান অবস্থান এবং ড. ইউনুসের প্রভাব নিয়ে আলোচনা তুলেছেন।
প্রিসিলার মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে এক অদ্ভুত সমীকরণ—ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ড. মুহাম্মদ ইউনুস একা একটা দলের চেয়েও শক্তিশালী, এ শক্তি জনতার, এ শক্তি সততার, এ শক্তি দেশপ্রেমের।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ড. ইউনুসের আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং সততার কারণে তিনি মিথ্যা বলার বা অসদাচরণের সুযোগ নেই। তাঁর বক্তব্যে, “ড. মুহাম্মদ ইউনুস মিথ্যা বলবেন না। তিনি একজন প্রথম সারির আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব; মিথ্যা বলা বা অসদাচরণ করলে তিনি বিশ্বের কাছে ছোট হয়ে দেখাবেন।”
তার প্রকাশিত ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রিসিলা দাবি করেছেন যে, ড. ইউনুস রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান না, বরং তিনি জনগণের জন্য ভালো কাজের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভালো কাজের মাধ্যমে যেভাবে সব রাজনৈতিক দলকে বিপদে ফেলছেন, তা লক্ষ্যণীয়। নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এমন কিছু কাজ করবেন, যা কোনো দল ক্ষমতায় থেকে পূর্বে করেনি বা ভবিষ্যতেও করতে পারবে না।” তিনি উদাহরণ হিসেবে বিমান ভাড়া কমানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণ, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করেছেন।
তবে, এই পোস্টে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের রাজনৈতিক কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রিসিলা লিখেছেন, “যে দলই নির্বাচন দাবী জানাচ্ছে, জনগণ তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করছে এবং তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে।” তিনি আরও মনে করেন যে, ড. ইউনুসের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পোস্টে ড. ইউনুসকে একজন বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যিনি ক্ষমতার লোভ ছাড়াই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রিসিলার ভাষায়, “ড. ইউনুস শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং বিশ্বের এক অমূল্য সম্পদ, যাকে অপমানের চরম ফল ভোগ করছেন পুরো শেখ পরিবার ও আওয়ামীলীগ।” তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “আসুন, আমরা সবাই মিলে এই পরিবর্তনের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করি।”
এই প্রিসিলার এই পোস্টটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ড. ইউনুসের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তবে, এতে উত্থাপিত বিষয়গুলোর সত্যতা এবং এর প্রভাব এখনও পরিষ্কার নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে এই বিষয়গুলো দেশের রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।