বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। শুল্ক আরোপের ঘোষণা পেছনের নির্দিষ্ট কারণ কি ?


দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সিদ্ধান্তটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে গৃহীত হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে, যা দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনের নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

শুল্ক বৃদ্ধির কারন কি ?
‘সময় টিভি’ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক হার বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। সময় টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তারা আরও জানিয়েছে, এই শুল্ক বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির একটি বড় বাজার।

রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণ সম্পর্কে ‘ধূমকেতু নিউজ’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তারা নিজেদের সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই তথ্য উপস্থাপন করেছে। ধূমকেতু নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে তারা এই সিদ্ধান্তের পেছনের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করেনি।


রপ্তানি সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপট সমন্ধে কি জানা যায় ?
‘বিডি প্রতিদিন’ তাদের একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রপ্তানি নীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনা মহামারীর সময়ে রপ্তানি আয় ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন বাজারে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিডি প্রতিদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পর জিএসপি সুবিধা হারানোর আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ২০টি দেশকে রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রপ্তানির তথ্য সমন্ধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য কি ?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮১.৮১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে, যার পরিমাণ ছিল ৪২.৬১৩ বিলিয়ন ডলার। এই তথ্যটি ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প’ শীর্ষক উইকিপিডিয়ার একটি প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে, যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে শুল্ক বৃদ্ধি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।

পূর্বের শুল্ক হার কত ছিলো ?
‘প্রথম আলো’র একটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে পূর্বে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য ছিল। এই তথ্যটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু পোস্টের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নতুন ঘোষণার মাধ্যমে এই হার ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট কি ?
‘সময় টিভি’র প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটি ইঙ্গিত করে যে, এই সিদ্ধান্তটি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির অংশ হতে পারে। সময় টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নীতি দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত হতে পারে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া কি ?
‘ধূমকেতু নিউজ’ জানিয়েছে, এই শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে বাংলাদেশি পণ্যের দাম বাড়াতে হতে পারে, যা ক্রেতাদের আকর্ষণ কমাতে পারে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সম্ভাব্য প্রভাব কি কি পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ?
‘বিডি প্রতিদিন’ তাদের বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ভূমিকা রাখে, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। তবে তারা এও বলেছে, বাংলাদেশ সরকার এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিকল্প বাজার খুঁজতে কাজ শুরু করতে পারে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি দেশের রপ্তানি খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ‘প্রথম আলো’, ‘সময় টিভি’, ‘ধূমকেতু নিউজ’, এবং ‘বিডি প্রতিদিন’ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট যে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে এর পেছনের পূর্ণাঙ্গ কারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল এখনও বিশ্লেষণের অপেক্ষায় রয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version