বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৩ থেকে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল জাজিরা, ইত্তেফাক এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে এই হামলার বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।

আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় মার্কিন বিমান হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া সাদা শহরে নিহতের সংখ্যা ৬ থেকে বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৩ জন। হুথিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আল মাসিরাহ টেলিভিশন এই তথ্য জানিয়েছে। তবে হুথি-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিবিসি বলছে, মার্কিন হামলায় ১৫ জন নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান সমর্থিত হুথিরা ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলি হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে। এর জবাবে ইয়েমেনে ‘চূড়ান্ত ও শক্তিশালী’ হামলা শুরু করেছে মার্কিন বাহিনী।
গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে হুথিদের বিরুদ্ধে চলমান এই হামলাই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান।

ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে হুথিদের স্থাপনা লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। হুথি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে এবং ৯ জন আহত হয়েছে। তবে বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে ২৪ জন নিহতের খবর এসেছে।

ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হুথির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে সানা এবং উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সাদায় সিরিজ বিস্ফোরণ হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের সানা এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল হুথিদের দখলে রয়েছে। আর সেখানেই হামলা হয়েছে। বেশ কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সানার বিমানবন্দরে কালো ধোঁয়া উড়ছে। তবে এসব ছবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইয়েমেনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের ওপর তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটির সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কমান্ড সেন্টারে একের পর এক আঘাত হেনেছে মার্কিন যুদ্ধবিমান। এতে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হুথি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। হুথির মুখপাত্র নাসরুদ্দিন আমের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই হামলা তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। গাজার জন্য সানা রক্ষাকবচ হয়ে থাকবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথিদের লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় ‘নরক বৃষ্টির’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ট্রাম্প হুথিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরানকেও হুমকি দিয়েছেন। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়া শিগগির বন্ধ করতে তেহরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প তেহরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয়, আমেরিকা তোমাকে সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনবে।
এটা কিন্তু তোমাদের জন্য ভালো হবে না।

হুথিরা এই হামলার জবাব দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এক বিবৃতিতে হুথি বলেছে, রাজধানী সানায় আবাসিক এলাকায় ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ আগ্রাসনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দায়ী। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে শনিবারের হামলায় যুক্তরাজ্য সরাসরি অংশ নেয়নি। বরং দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে নিয়মিত সহায়তা করে আসছে।

ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। আল জাজিরা, ইত্তেফাক এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে হামলার বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এবং হুথিদের প্রতিক্রিয়া এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং সংঘাতের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version