প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। এই সফরটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাসস ও প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে বহনকারী একটি বিশেষ বিমান দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
ইত্তেফাক ডিজিটাল রিপোর্ট অনুযায়ী, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সরাসরি উখিয়ায় যান। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
সমকাল পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের কথা শোনেন এবং ক্যাম্পের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব উখিয়ায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন।
ইত্তেফাক ডিজিটাল রিপোর্ট অনুসারে, বিকেলে তারা এই ইফতারে যোগ দেন।
পরিদর্শন ও ইফতার শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য ও উদ্বেগ:
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
তিনি আরও বলেন, এই প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরি।
সমকাল পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাসে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাচ্ছে এবং সহায়তা কমানো এক ধরনের অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের আরও ভালো পরিবেশ প্রয়োজন এবং ক্যাম্পে তাদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে জাতিসংঘ।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার এবং তাদের সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সম্মানের সঙ্গে বসবাসের জন্য এই সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহায়তা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এবং তাদের জন্য যথেষ্ট খাদ্য ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহায়তা প্রয়োজন।
সমকাল পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার জন্য আবেদন করেন।
সমকাল পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের ‘প্রকৃত পরিবর্তন’ আনতে সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি, ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকিং খাত, কমে যাওয়া রিজার্ভ ও ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতি এখন সুসংহত হয়েছে। রপ্তানি মাসের পর মাস বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও আগের চেয়ে ভালো।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রশংসা করেছেন এবং তাদের কার্যক্রমকে অসাধারণ বলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আসিয়ানের সদস্য হতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে, যা দেশকে ‘একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলবে এবং নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।