বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি) এবং এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি বা ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি) নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন বেশ কিছু গতিশীলতা ও জটিলতা কাজ করছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে ক্ষমতার ভারসাম্য, নতুন দলগুলোর উত্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের বক্তব্য এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করলে কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়।

বিএনপি’র রাজনীতি

বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল, যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার লড়াইয়ে আছে। শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি তাদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে। তারা দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইছে। বিএনপি’র নেতারা, যেমন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বারবার বলেছেন যে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আওয়ামী লীগের মতো কোনো দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন, যদিও তাদের প্রতি তাদের বিরোধিতা স্পষ্ট। তারা মনে করে যে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার পর এখন তাদের জনসমর্থন বাড়ছে এবং নির্বাচনে তারা শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। তবে, দলের অভ্যন্তরে দুর্নীতি ও গ্রুপিংয়ের অভিযোগও উঠছে, যা তাদের ইমেজের জন্য চ্যালেঞ্জ।

এনসিপি’র রাজনীতি

এনসিপি একটি নতুন রাজনৈতিক দল, যারা জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের সফলতার পর আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা নিজেদেরকে একটি ভিন্ন ধরনের দল হিসেবে দাবি করে, যারা পুরনো রাজনৈতিক শক্তি (আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি) থেকে আলাদা হয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। নাহিদ ইসলামের মতো তরুণ নেতারা এই দলের নেতৃত্বে আছেন এবং তারা দুর্নীতি দমন, শিক্ষা সংস্কার এবং স্বচ্ছতার উপর জোর দিচ্ছেন। তবে, এনসিপি’র উত্থান নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে—বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়ে। বিএনপি এবং অন্যান্য দল মাঝে মাঝে অভিযোগ করেছে যে এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে, যদিও নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করে এই অভিযোগের প্রতিবাদ করেছেন।

প্রধান উপদেস্টার বক্তব্য থেকে কি বোঝা যায় ?

মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, বেশ কয়েকটি বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তার বক্তব্য থেকে যা বোঝা যায়: ১. নির্বাচন ও সংস্কার: ইউনূস বারবার বলেছেন যে নির্বাচন হবে, তবে তার আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার (বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন) সম্পন্ন করা দরকার। তিনি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে চাননি, যা বিএনপি’র মতো দলগুলোর জন্য হতাশার কারণ হয়েছে। বিএনপি মনে করে এটি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল হতে পারে। ২. নিরপেক্ষতা: ইউনূস দাবি করেছেন যে তার সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়। এনসিপি’র সাথে তার সরকারের সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে যারা রাজনীতি করতে চায়, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করেছে। ৩. স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা: ইউনূস জোর দিয়েছেন যে তার সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে দেশকে স্থিতিশীল করা। তিনি আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে তারা দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সবাইকে শান্ত থাকতে এবং সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। ৪. জাতীয় ঐক্য: ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে সংস্কার করা হবে।

বিএনপি এবং এনসিপি দুটোই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তবে তাদের লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। বিএনপি দ্রুত ক্ষমতায় ফিরতে চায় এবং নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে এনসিপি একটি নতুন বিকল্প হিসেবে পুরনো রাজনীতির বাইরে গিয়ে জনগণের সমর্থন পেতে চায়। ইউনূসের বক্তব্যে একটা সতর্ক এবং সংস্কারকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়, তবে তার এই ধীরগতির পদ্ধতি বিএনপি’র মতো দলের ধৈর্যের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে আগামী দিনে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে, যদি না সব পক্ষ একটা সাধারণ লক্ষ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version