কক্সবাজার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: কক্সবাজারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটির কাছে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠলেও, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এটি দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলা এবং বিমান বাহিনী কেবল ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। সোমবার দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম শিহাব কবির নাহিদ (৩০), যিনি পেশায় ব্যবসায়ী এবং সমিতিপাড়ার নাছির উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়, এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে নানা তথ্য ও বিশ্লেষণ উঠে এসেছে।
ঘটনার সূত্রপাত
আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিমান বাহিনীর একটি চেকপোস্টে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতিপাড়ার প্রায় দুই শতাধিক মানুষ বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয়রা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে বিমান বাহিনী রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার জন্য ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে, এতে প্রাণঘাতী কোনো গুলি ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেছে আইএসপিআর। বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, এ ঘটনায় বিমান বাহিনীর চার সদস্য আহত হয়েছেন এবং তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদনে বলেছে, সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা গেছে এবং শিহাব কবির নাহিদ নামে একজন নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতের মা আমেনা খাতুন, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, হাসপাতালে এসে অভিযোগ করেছেন যে বিমান বাহিনী তার ছেলের মাথায় গুলি করেছে। দৈনিক শিক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিহাব একজন শিক্ষকের সন্তান এবং এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, আইএসপিআর এ ঘটনাকে “দুর্বৃত্তদের হামলা” হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে স্থানীয়রা বিমান বাহিনীর গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেছে এবং ঝোপঝাড়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছে। তবে, আগুন বড় আকারে ছড়িয়ে পড়েনি। প্রথম আলো আইএসপিআরের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কিছু কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে যুবক নিহত হওয়ার তথ্য ছড়িয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে, যা সত্য নয়। আইএসপিআর দাবি করেছে, ছড়ানো ছবিতে দেখা গুলির খোসা ফাঁকা গুলির, যা প্রাণঘাতী নয়।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষ থেকে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর জানিয়েছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার রোধে আইএসপিআর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এনটিভি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিমান বাহিনী শিহাবের মৃত্যুতে গভীর শোক ও তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া
দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে একজন স্থানীয় নেতা সায়েরের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই সংঘর্ষ পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন হঠাৎ এত মানুষ ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলো এবং কীভাবে পরিস্থিতি এত দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠল। সমকাল জানিয়েছে, স্থানীয়রা বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি ছোড়ার অভিযোগ তুললেও, আইএসপিআর তা অস্বীকার করেছে। দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তারা এই ঘটনাকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। আনন্দবাজার পত্রিকা ও সংবাদ প্রতিদিনও এটিকে নাশকতার সম্ভাবনা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এদিকে, কালের কণ্ঠ নিহত শিহাবের পরিচয় প্রকাশ করে জানিয়েছে, তিনি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তার মৃত্যু এলাকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। মানবজমিন ও বাংলাদেশ প্রতিদিন আইএসপিআরের বক্তব্যের ওপর জোর দিয়ে বলেছে, বিমান বাহিনী দেশের জনগণের নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ ঘটনায় তারা কোনো অহেতুক হিংসার পথে যায়নি।
পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কি?
ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন জানিয়েছে, এ ঘটনার পর বিমান বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। উত্তরবঙ্গ সম্বাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় এলাকাটি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এবং পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। স্বাধীন আলো ও বিভিন্ন স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তের দাবি উঠেছে এবং স্থানীয়রা নিরপেক্ষ বিচার চায়।
এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে এটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আইএসপিআর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং জনগণের কাছে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছে।
কক্সবাজারের এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সরকার ও প্রশাসন কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়, তা আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা সব মহলেই উঠে এসেছে।