নয়াদিল্লিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গত ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। তবে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে ছিল, যা নিয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে উষ্মা ও প্রত্যাশার সুর লক্ষ্য করা গেছে।
ছয়টি বিষয়ে মতৈক্য কি কি ?
- সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা: বিজিবি সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামাতে বিএসএফের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিএসএফ ‘অ-প্রাণঘাতী’ নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং যৌথ টহল বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
- মাদক ও চোরাচালান রোধ: মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান বন্ধে উভয় পক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
- অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ: বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে আগতদের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপে একমত হয়েছে দুই বাহিনী।
- সীমান্তে কাঁটাতার ও অবকাঠামো নির্মাণ: শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতার নির্মাণে যৌথ পরিদর্শন ও সম্মতির ভিত্তিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
- গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান: সীমান্তে অপরাধ দমনে আগাম তথ্য বিনিময়ে উভয় পক্ষ রাজি হয়েছে।
- জনসচেতনতা ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি: সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে এবং উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে ছয় বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।” তবে বিস্তারিত না জানিয়ে সীমান্তে শান্তি ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। সীমান্ত হত্যার বিষয়ে ভারতের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি।
দৈনিক ইত্তেফাক সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেছে, “সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিএসএফের প্রতি বিজিবির আহ্বান।” বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এ বিষয়ে উদ্বেগ জানালেও বিএসএফের পক্ষ থেকে কেবল টহল বাড়ানোর আশ্বাস এসেছে, যা অনেকের কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি।
News18 বাংলা লিখেছে, “সীমান্তে হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের আওয়াজ, ধুয়ে দিল ভারত! দিল্লির চাপেই সুর নরম।” ভারত কাঁটাতার নির্মাণ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নিজেদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা।
সাধারণ বাংলাদেশিদের কাছে প্রশ্ন, এই ছয়টি মতৈক্য কি সীমান্তে রক্তপাত বন্ধ করতে পারবে? গত কয়েক বছরে বিএসএফের গুলিতে শতাধিক বাংলাদেশি নিহত হয়েছে, যা সম্পর্কে উত্তেজনার বড় কারণ। একজন সাধারণ সাংবাদিক হিসেবে বলি, কাগজে-কলমে প্রতিশ্রুতি অনেক হলেও মাটিতে তার প্রতিফলন দেখতে সময় লাগবে। সীমান্তে শান্তি চাইলে দুই পক্ষের সদিচ্ছার পাশাপাশি কঠোর জবাবদিহি জরুরি।