ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বিশেষ করে রাশিয়া, চীন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত বিষয়ে তার সাম্প্রতিক বক্তব্য নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাশিয়ার সুবিধাজনক অবস্থান সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য
‘ডেইলি জনকণ্ঠ’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ট্রাম্প দাবি করেছেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে রাশিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তিনি বাইডেন প্রশাসনের নীতির সমালোচনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নেতৃত্বের কারণে রাশিয়া তার কৌশলগত সুবিধা নিচ্ছে।
চীনের সমর্থন প্রসঙ্গে
‘দৈনিক ইনকিলাব’ জানিয়েছে, চীন ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে। চীনের সমর্থন পেলে ট্রাম্পের নীতি বর্তমান প্রশাসনের তুলনায় আলাদা হতে পারে।
জেলেনস্কি সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য
‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটি বিশ্ব কূটনীতিতে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ট্রাম্পের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের দিক
ট্রাম্পের অতীত নীতির দিকে তাকালে বোঝা যায়, তিনি প্রচলিত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি থেকে অনেক ক্ষেত্রেই সরে আসতে পারেন। তার ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতি নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলোর দিকে যেতে পারে:
১. ন্যাটোর প্রতি কম আগ্রহ
‘ডেইলি স্টার’ জানিয়েছে, ট্রাম্প পূর্বেও ন্যাটোর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর জন্য যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করছে না এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি বোঝা নিতে হচ্ছে। যদি তিনি পুনরায় ক্ষমতায় আসেন, তবে ন্যাটোর প্রতি তার মনোভাব আরও বদলে যেতে পারে।
২. রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার পরিকল্পনা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
৩. চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
৪. মধ্যপ্রাচ্যে ভিন্ন কৌশল
‘আল জাজিরা’ জানিয়েছে, ট্রাম্প ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে পারেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
১. ইউরোপের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হওয়া: যদি ট্রাম্প ন্যাটোর প্রতি আগ্রহ হারান, তবে ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আরও ব্যয় করতে হবে। ২. রাশিয়ার সুবিধা বৃদ্ধি: যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে কম সহায়তা দেয়, তবে রাশিয়া এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। ৩. মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি: ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিলে অঞ্চলটিতে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে। ৪. চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি: নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তার নীতির পরিবর্তন বিশ্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।