অনলাইন প্রতিবেদক
লালমনিরহাটসহ তিস্তা পাড়ের মানুষ হঠাৎ করেই বিস্মিত—খরা মৌসুমেও নদীতে উজানের ঢল! শুকনো বালুচর নিমেষে তলিয়ে যাচ্ছে পানির তোড়ে। এই আকস্মিক পানি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা উঠে এসেছে।
কী ঘটেছে?
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার পর থেকে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানির প্রবাহ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫০.১০ সেন্টিমিটার, যেখানে স্বাভাবিক মাত্রা ৫২.১৫ সেন্টিমিটার। এতে বিস্মিত স্থানীয় কৃষকরা, কারণ এ সময়ে তিস্তার পানি কম থাকার কথা ছিল। ফলে আশপাশের চরের ফসল—রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া ও বাদামের খেত তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কী বলছে গণমাধ্যমগুলো?
এই ঘটনার ব্যাখ্যা নিয়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভিন্নমুখী খবর প্রকাশ হয়েছে।
ইত্তেফাক জানিয়েছে, ভারত থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তার পানি বেড়েছে এবং পানির চাপে তিস্তা ব্যারাজের ছয়টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে এটিকে প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “ভারত থেকে পানি আসছে, কিন্তু কতটা আসবে বলা যাচ্ছে না।”
জাগো নিউজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানিবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ এর ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ঠিক আগেই এই পানি বৃদ্ধি ঘটায় আন্দোলনকারীদের সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
কিছু সংবাদমাধ্যম একে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, ভারত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলে “নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকারকে চাপে ফেলার জন্য” পরিকল্পিতভাবে গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দিয়েছে।
বাংলানিউজ ২৪ ও যুগান্তর-এর প্রতিবেদনে আন্দোলনকারীদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিকে বাধাগ্রস্ত করতেই ভারত এই পানি ছেড়েছে। তারা এ ঘটনাকে ভারতের পরিকল্পিত ‘কূটনৈতিক চাপ’ হিসেবে দেখছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
তিস্তা পাড়ের মানুষজন একদিকে পানির বাড়তি চাপে আতঙ্কিত, অন্যদিকে এর পেছনে কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান। স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, “শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি এত বাড়বে, এটা আমরা ভাবতেই পারছি না। এতে আমাদের ফসল ডুবে যাচ্ছে। সরকার কি এর কোনো সমাধান দেবে?”
একইভাবে স্থানীয় জেলে কদম আলী অভিযোগ করে বলেন, “এটা ভারত ইচ্ছে করেই করছে, যাতে আমরা আন্দোলন করতে না পারি। আমাদের সব কিছু ডুবিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র!”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বক্তব্য
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপ অপারেটর নুরুল ইসলাম বলেন, “উজান থেকে প্রায় ৮০০ কিউসেক পানি প্রবেশ করেছে, যার ফলে পানি বেড়েছে। তবে রবিবার দুপুরের পর পানি কমতে শুরু করেছে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “ভারত যা-ই করুক, আমাদের আন্দোলন চলবে। তিস্তা বাঁচাতে ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি সফল করব।”
তিস্তার পানিবৃদ্ধির ঘটনাটি প্রকৃতির খেয়াল, নাকি রাজনৈতিক চালবাজি—তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, পরিকল্পিত হোক বা না হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক ও সাধারণ মানুষ। সরকারের উচিত দ্রুত বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা করে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা।
তাহলে প্রশ্ন রয়ে যায়: এই পানিবৃদ্ধি কি প্রকৃতির খেলা, না রাজনৈতিক চাল?