ঢাকায় সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে কয়েকদিন থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে মহাখালী রেলগেট এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেছেন তারা, যার ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীদের চারপাশ ঘিরে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘেরাও ও জলকামান প্রস্তুত

ইত্তেফাক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রেল লাইনের ওপর ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী বসে পড়েন এবং আশপাশে শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। তাদের ঘিরে ফেলে পুলিশ, ডিবি, বিজিবি এবং এবিবিএন সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রেলপথ অবরোধের ফলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন

প্রথম আলো জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ফিরে গেছে। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন। উপস্থিত রেলওয়েকর্মীরা লাল পতাকা দেখিয়ে ট্রেন থামানোর উদ্যোগ নেন। ট্রেনের চালকও লাল পতাকা দেখে ধীরে ধীরে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেন এবং মহাখালী রেলগেটের কাছে এসে থামান।

সড়ক অবরোধের পঞ্চম দিন

প্রথম আলো আরও জানায়, টানা পঞ্চম দিনের মতো শিক্ষার্থীরা তিতুমীর কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে সড়কের দুই পাশে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবার যানবাহন চলতে দেওয়া হলেও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবে না।

শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত

এই আন্দোলন নিয়ে জন ভোগান্তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতও দেখা যাচ্ছে । সেলিম জাহান (ইত্তেফাক)-এ প্রকাশিত মতামতে প্রশ্ন তুলেছেন, “দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে জিম্মি করা কতটা নৈতিক?” তিনি বলেন, “একটি দাবির কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। অফিস ফেরত মানুষদের অতিরিক্ত সময় রাস্তায় থাকতে হচ্ছে, রোগীদের চিকিৎসা পেতে বিলম্ব হচ্ছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, আন্দোলনকারীদের উচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং দাবি আদায়ের অন্য বিকল্প উপায় খোঁজা।

শিক্ষার্থীদের অবস্থা ও সরকারের প্রতিক্রিয়া কি ?

শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জন আমরণ অনশনে রয়েছেন, যার মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে প্রথম আলো জানিয়েছে। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সময় বেঁধে দিয়ে কোনো দাবি মানা হবে না।” শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবির যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করা হচ্ছে, তবে চাপে পড়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।”

সংঘর্ষের আশঙ্কা, পরিস্থিতি উত্তপ্ত

বাংলাদেশ প্রতিদিন জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি মানা না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আন্দোলনের পরিধি বাড়িয়ে মহাখালী, আমতলী, রেলগেট ও গুলশান লিংক রোড অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সরকার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয় কি না, সে দিকেই এখন নজর সবার।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version