অনলাইন ডেস্কঃ
দেশের বৃহত্তম বইমেলা, অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৫, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।


নতুন প্রেক্ষাপটে বইমেলা
বইমেলার এবারের প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’, যা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছে প্রথম আলো। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, “গেল ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর এবারের বইমেলায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলা হবে। এরই অংশ হিসেবে মেলায় থাকবে ‘জুলাই চত্বর’, যেখানে গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো তুলে ধরা হবে।”
সমকাল-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাগত বক্তব্যে জানান, এবারের বইমেলা শুধু প্রকাশনা ব্যবসার আয়োজন নয়, বরং এটি নতুন বাংলাদেশের চিন্তাধারা ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে।”


প্রকাশকদের অংশগ্রহণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কালের কণ্ঠ জানিয়েছে, এবারের মেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি স্টল, আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৭টি প্যাভিলিয়ন থাকছে, যার মধ্যে একটি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, বাকি ৩৬টি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
যুগান্তর জানিয়েছে, বইমেলার নিরাপত্তায় এবার তিন শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা, আর্চওয়ে গেট এবং গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারি থাকছে। বিশেষ করে, লিটল ম্যাগাজিন কর্নার, যেখানে প্রায় ১৩০টি লিটল ম্যাগাজিন স্টল রয়েছে, সেটির নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


নতুন সংযোজন ও পাঠকদের প্রত্যাশা
বাংলাদেশ প্রতিদিন লিখেছে, “এবারই প্রথম মেলায় ৩০টি শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে, যা দর্শনার্থীদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়া খাবারের স্টলসহ অন্যান্য সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে।”
অন্যদিকে, বণিক বার্তা উল্লেখ করেছে, “পাঠকদের আকৃষ্ট করতে নতুন লেখকদের বই এবং বিশেষ মূল্যছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবারের মেলায় তরুণদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ডিজিটাল বুক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছে।”

মেলার সময়সূচি ও বিশেষ আয়োজন
নয়া দিগন্ত-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বইমেলা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে, তবে সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বিশেষভাবে ৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বাদে শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশু প্রহর’ চালু থাকবে।
ইত্তেফাক জানায়, “২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বইমেলা সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।”


উদ্বোধনী বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “একটি জাতির উন্নয়ন ও সংস্কৃতির বিকাশ বইয়ের মাধ্যমে হয়। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বইমেলার ভূমিকা অনস্বীকার্য।”
এ প্রসঙ্গে দৈনিক সংগ্রাম লিখেছে, “বইমেলার উদ্বোধনী ভাষণে গণতন্ত্র, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানানো হয়।”

এবারের বইমেলা শুধু বই বিক্রির জায়গা নয়, বরং সাম্প্রতিক পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। প্রকাশক, লেখক ও পাঠক—সবাই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই সাংস্কৃতিক উৎসবে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী। দৈনিক সংবাদ একে ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন সময়ের প্রথম সাংস্কৃতিক উদযাপন’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version