কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর অভিযানে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে জনমনে । মৃত যুবদল নেতার  পরিবারের অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সরকার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ।

সন্তানদের নিয়ে বিচার চেয়ে কাঁদলেন স্ত্রী  

সমকাল পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে ‘সচেতন এলাকাবাসী’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন তৌহিদুলের পরিবার ও এলাকাবাসী। সেখানে তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন তুলে বলেন, “আমার স্বামী কোনো সন্ত্রাসী ছিল না, তার কোনো অপরাধ ছিল না। সেনাবাহিনী আমাকে আশ্বস্ত করেছিল, তাকে কিছু করা হবে না। তাহলে কেন আমার চার সন্তানকে এতিম করা হলো?” 

ঐ দিন ঘটনার রাতে (বৃহস্পতিবার)  লুৎফুর রহমান যিনি তৌহিদুলের সঙ্গে আটক হয়েছিলেন , মানববন্ধনে এসে বলেন, “তৌহিদকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছে যে সে দাঁড়াতেই পারছিলেন না। সকালে তাকে গোমতীতে গোসল করিয়ে নামাজ পড়তে বলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি দাঁড়াতে পারেননি।” 

সরকারের দ্রুত তদন্তের নির্দেশ 

প্রথম আলো পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দা জানায়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।” 

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকার ইতোমধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কাজ করা কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে এবং অপরাধ ব্যবস্থাপনায় আইনগত সংস্কার আনতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। 

সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার প্রত্যাহার ও তদন্ত কমিটি  

এই ঘটনা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার করেছে এবং একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে , “তদন্তে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর  বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “তৌহিদুল ইসলামকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছিল। তবে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।”  

পরিবারের অভিযোগ ও পুলিশের বক্তব্য কি?

ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, তৌহিদুলের ভাই আবুল কালাম অভিযোগ করেন, “আমার ভাই কখনই কোনো অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাকে অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”

অন্যদিকে, মামলার অভিযগের বিষয়ে  কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ওসি মহিনুল ইসলাম সমকাল কে বলেন, “এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”  

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বাংলা ট্রিবিউন কে বলেন, “তৌহিদুলকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তিনি মৃত ছিলেন। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।” 

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইত্তেফাক কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। আমরা এর বিচার চাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।” 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) প্রথম আলো কে জানায়, “নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরও উৎসাহিত করবে।”  

পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত

তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় কুমিল্লায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সমকাল জানিয়েছে। অন্যদিকে, সরকার ও সেনাবাহিনী তদন্তের আশ্বাস দিলেও নিহতের পরিবার ও রাজনৈতিক মহল সুষ্ঠু বিচারের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে।  

এই ঘটনায় দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেরও নজর রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version