আমেরিকাতে নেটিভ আমেরিকান এবং অ্যাবরিজিন শব্দ ব্যবহৃত হয়, যেখানে আদিবাসীদের প্রাচীন ভূমির অধিকার স্বীকৃত। বাংলাদেশে, তবে, এই ধরনের আদিবাসী সংস্কৃতির কোনো সরকারী স্বীকৃতি নেই।
বিবিসি বাংলা জানাচ্ছে, ২০০৭ সালের জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস ডিক্লেয়ারেশন অন দ্য রাইটস অব ইনডিজেনাস পিপলস’ ঘোষণাপত্রে বিশ্বের আদিবাসী জনগণের অধিকার স্বীকৃত হলেও, বাংলাদেশ ওই ঘোষণায় স্বাক্ষর করেনি এবং ‘আদিবাসী’ শব্দটিও ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। জাতিসংঘের ঘোষণায় আদিবাসীদের ভূমি এবং সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে বলে সরকারের আশঙ্কা।
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দাবির মূলে কি ?
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে কথা বলছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেতা গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, যিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের যে সংজ্ঞা রয়েছে, সেটির সাথে আমরা খাপ খাই। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যই আমাদের আদিবাসী পরিচয়। আমরা কখনোই দাবি করিনি যে আমরা এই ভূখণ্ডের একমাত্র আদি বাসিন্দা। তবে, বিশ্বমানের সংজ্ঞায়ও আমরা আদিবাসী।”
এই নেতার মতে, আদিবাসী পরিচয় লাভ করলে তাদের সাংবিধানিক অধিকারগুলিও শক্তিশালী হবে। উদাহরণস্বরূপ, গারো জনগণের জমি থেকে ইকো পার্ক তৈরির উদ্দেশ্যে তাদের উচ্ছেদের ঘটনাটি বারবার ঘটে আসছে, কিন্তু আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেলে তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
রাজনৈতিক সংকট এবং ভূমি অধিকার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহারে রাজনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসান এ শাফী জানান, “সরকার এই শব্দটি ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছে কারণ, আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে ভূমি অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি উঠবে।”
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি। ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি দিলে সেখানে এক ধরনের সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের দাবি উঠবে, যা সামরিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
সমাধানের পথ
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান মনে করেন, এই সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের উচিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাথে আলাপ-আলোচনায় বসা এবং তাদের দাবির স্পষ্টতা বোঝার চেষ্টা করা। তবে, তিনি আরও জানান, “শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, তাদের সাংবিধানিক অধিকার এবং ভূমির অধিকার রক্ষা করা উচিত।”
এই বিতর্কটি সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়। সরকারের উচিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও আদিবাসী জনগণের স্বীকৃতি এবং অধিকার সম্পর্কিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে সাংবিধানিক সংকটের পাশাপাশি তাদের উন্নয়নও সম্ভব হয়।
বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ শব্দ নিয়ে দ্বন্দ্বের এই মীমাংসা, শীঘ্রই সমাধান হবে কিনা, তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।
বিবিসি বাংলা। (২০২৫, জানুয়ারি ১৮)।’আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে বাংলাদেশে বারবার এত বিতর্ক কেন?বিবিসি নিউজ বাংলা https://www.bbc.com/bengali/articles/c0k55njryzno