ডয়চে ভেলে বাংলা-এ হারুন উর রশীদ স্বপন এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এখন পর্যন্ত পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফের সহযোগিতায় পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও, ২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ হ্যাকিং কেলেঙ্কারি থেকে প্রাপ্ত ৪০% অর্থ ইতোমধ্যে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে, এর বাইরেও বহু অর্থ এখনও পাচার হয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)-কে প্রধান আসামী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০২৪ সালের গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, এবং ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৯০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে গেছে।
বর্তমান সরকার পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা, যেখানে ব্যাংক দখলের মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
এরই মধ্যে পাচারের অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করছে। এই টাস্কফোর্সের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ চিহ্নিত করা এবং তা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা।
দুদকও এই প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েছে, এবং বর্তমানে তারা ১২টি দেশে ৭১টি চিঠি পাঠিয়েছে, যার মধ্যে ২৭টি চিঠির উত্তর তারা পেয়েছে।
এছাড়া, সিঙ্গাপুরে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ফেরত আনা এক মিলিয়ন ডলারের ঘটনা স্মরণ করে সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম বলেন, এরকম প্রক্রিয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং জটিল হতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও, এতে কিছু বাধা আসতে পারে।
এ বিষয়ে, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নুরুল আমিন মন্তব্য করেন যে, পাচারের অর্থ ফেরত আনা একটি কঠিন প্রক্রিয়া হলেও, এর সাথে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির আইনি বাধা কাটিয়ে এটি সম্ভব হতে পারে। এছাড়া, তিনি আরও বলেন, পাচার রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
অর্থ পাচারের তদন্তে বিভিন্ন সংস্থা যেমন দুদক, এনবিআর, সিআইডি, বিএসইসি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তবে, এই প্রচেষ্টা সফল করতে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
//ডয়চে ভেলে বাংলা (Deutsche Welle Bengali)