সরকার আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ঘোষণাপত্র সরকার তৈরি করবে না; এটি সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে।

সরকারের ভূমিকা এবং আলোচনার লক্ষ্য কি?

মাহফুজ আলম বলেন, “সরকার ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে। এটি হবে রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং অন্যান্য অংশীজনের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, আলোচনার কাজ আগামী সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়, অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। তবে সবার সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের সুযোগ নাও হতে পারে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঐকমত্যের ভিত্তিতে কি এই জুলাই ঘোষণাপত্র ?

জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় কোনো রাজনৈতিক পক্ষ বা সংগঠনের বিশেষ অবস্থান রাখা হবে না বলে জানান মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, “ঘোষণাপত্রের উদ্দেশ্য হবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দলিল প্রণয়ন করা।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির বেঁধে দেওয়া ১৫ জানুয়ারির সময়সীমা নিয়ে তিনি বলেন, “সময়ের কিছু পরিবর্তন হতে পারে, তবে এটি দীর্ঘসূত্রিতা পাবে না। শিক্ষার্থীরা সংযম দেখাবেন বলে আমরা আশাবাদী।”

ঘোষণাপত্রে সম্ভাব্য বিষয়বস্তু কি?

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, ঘোষণাপত্রে দুটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশে গণ–অভ্যুত্থানের পটভূমি ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হবে। দ্বিতীয় অংশে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা থাকবে। তিনি বলেন, “বিতর্কিত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি এমন একটি দলিল হবে যেখানে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নিপীড়িতদের কথা সর্বজনীন ভাষায় তুলে ধরা হবে।”

সংবিধান ও রাজনৈতিক মতবিরোধ কি কি ?

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাহফুজ আলম বলেন, “সংবিধানের বিষয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে ঐকমত্য প্রয়োজন। যেসব বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে, সেগুলো আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন কবে ?
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম জানান, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সংস্কারের প্রস্তাবগুলো এ মাসেই পাওয়া যাবে। এর পরেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হবে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সেবা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

সরকারের এই উদ্যোগকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রণয়নের চেষ্টা বলে উল্লেখ করেন মাহফুজ আলম। তিনি শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version