সচিবালয়ে আগুন: বিবিসি বাংলার পাঁচ প্রশ্নে প্রাথমিক তদন্তের উত্তর
বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উঠে এসেছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যা জনমনে সন্দেহ ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে । বিবিসি নিউজ বাংলার প্রতিবেদক আবুল কালাম আজাদের বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তদন্ত রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে এই ৫ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

সচিবালয়ের আগুন বৈদ্যুতিক ত্রুটি নাকি নাশকতা?
মঙ্গলবার সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সচিবালয়ের আগুনের কারণ বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশন’। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ২৬ ডিসেম্বর রাত ১টা ৩৬ মিনিটে একটি বৈদ্যুতিক স্পার্কের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হতে দেখা যায়।
তবে, নাশকতার অভিযোগ কেন নাকচ করা হলো? তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “কোনো বিস্ফোরণ কিংবা ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED) ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি । বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত জানান, “স্পার্কের পর অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে আগুন লেগেছে। এটি নাশকতার সম্ভাবনা কমানোর পক্ষে একটি যুক্তি।”
সাদা পাউডার নিয়ে বিভ্রান্তি কি?
সাদা পাউডার জাতীয় বস্তুটির উপস্থিতি নিয়ে প্রথমে সন্দেহ দেখা দেয় । তবে, তদন্ত কমিটি নিশ্চিত করেছে এটি চুন জাতীয় পদার্থ। কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইয়াছির আরাফাত বলেন, “আমরা বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষা করে তেমন কিছু পাইনি।”
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রুমগুলো কিভাবে ?
তদন্তে দেখা গেছে, আগুন দুই দিকের বদ্ধ রুমে ছুটে গিয়ে যেসব রুমে দাহ্য বস্তু ছিল সেগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত বলেন, “যে রুমগুলো বেশি ডেকোরেটেড ছিল, সেগুলো বেশি পুড়েছে।” এছাড়া এসি বিস্ফোরণের কারণে ক্ষতি আরও বেড়ে গেছে।
কুকুরের রহস্য ঘিরে কি জানা গেলো?

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, আগুন লাগার আগে কুকুরটি একটি চেয়ারে ঘুমিয়ে ছিল। তবে, এটি কীভাবে ছয় তলায় প্রবেশ করল, তার উত্তর এখনও অজানা , সিসিটিভি ফুটেজ আরো পর্যবেক্ষন করার প্রয়োজন আছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় ।
অগ্নিনির্বাপনে বিলম্বর কারন ?
ফায়ার সার্ভিস মাত্র তিন মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও সচিবালয়ের গেট দিয়ে বড় গাড়ি প্রবেশে বাধা ও পানির সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব ঘটে। এ বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত বলেন, “ফায়ার অ্যালার্ম এবং অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। ফায়ার ডিটেক্টর ছিল না, হোসগুলোও অকার্যকর ছিল বা পুর্ব থেকে কেউ নস্ট করে রেখেছে বা চুরি করেছে ।”

তদন্তের ভবিষ্যৎ দিক
তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, অধিকতর বিশ্লেষণের জন্য ঘটনার আগের দীর্ঘ সময়ের ফুটেজ পর্যবেক্ষণ এবং সংগৃহীত আলামতের বিদেশে পরীক্ষা করা হবে। ভবনটির অগ্নি নির্বাপনের বর্তমান ব্যবস্থাগুলোও নতুন করে যাচাই করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

সচিবালয়ে আগুন নিয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদনে বৈদ্যুতিক ত্রুটিকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, অধিকতর তদন্ত এবং সুরক্ষার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সেজন্য ত্রুটিমুক্ত অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version